আদালত প্রতিবেদক
‘টাউট’ আইনজীবীর ফাঁদে বিচারপ্রার্থীরা
ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত। আসামিদের বহনকারী একেকটি গাড়ি যখন আদালতে প্রবেশ করে তার পিছু ছুটতে থাকে আসামিদের স্বজনরা। প্রত্যাশা ন্যায়বিচারের। মাহবুব সিকদার নামের এক ব্যবসায়ী ও তার বন্ধু অক্টোবরে রাজধানীর রামপুরা থানায় মাদক মামলার আসামি হয়ে জেলে যান। এরপর তাদের স্বজনরা আইনি লড়াই করতে ঢাকার নিম্ন আদালতে যান। এক আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন করাতে কয়েক দফায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকাও দেয় দুই পরিবার। মামলার কোনো সুরাহা না হওয়ায় অন্য আইনজীবী ধরতে বাধ্য হয় মাহবুবের পরিবার। মাহবুব সিকদার বলেন, ‘জামিন করাবে বলে টাকা নিল। এরপর ৮ মাস পর্যন্ত আমাকে ঘুরাল। এখন টাকা চাইতে গেলে টাকা তো দেয়নি তার ওপর হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।’
জামিনে বেরিয়ে আসার পর ফিরোজ রহমান মন্টু নামের ওই আইনজীবীর কাছে টাকা ফেরত চাইলে তা দিতে অস্বীকারের পাশাপাশি হুমকিও দেন তিনি।
এভাবেই ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণে অসাধু আইনজীবীর দৌরাত্ম্যে প্রায়ই হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে এখানে আসা বিচারপ্রার্থীদের। এদের ধরতে টাউট উচ্ছেদ কমিটি থাকলেও না জানার কারণে অনেকেই সেখানে গিয়ে অভিযোগ দিতে পারছেন না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আদালত পাড়ায় প্রয়োজন একটি তথ্য কেন্দ্রের।
ঢাকা আইনজীবী সমিতি বলছে, আদালত প্রাঙ্গণে ভুয়া কিংবা অসৎ আইনজীবী ধরতে রয়েছে ‘টাউট উচ্ছেদ কমিটি’। প্রতারণা কিংবা হয়রানির অভিযোগে প্রতি বছর প্রায় অর্ধশত মামলাও হয় এই কমিটি থেকে। তবে সচেতনতার অভাবে অনেক অসৎ আইনজীবীকে ধরা সম্ভব হয় না বলেও জানান তারা।
ঢাকা বার সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান বলেন, ‘একেবারে নিশ্চিহ্ন করতে পারব না। কিন্তু এটাকে অন্তত দমানো যায়।’
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে যদি একটি ডিজিটাল তথ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় তাহলেই কমে আসবে এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সংখ্যা।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, এই আদালতে সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীর সংখ্যা ২২ হাজারেরও বেশি। এছাড়াও শিক্ষানবিশ আইনজীবীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার।
"