গাজী মো. রসেল
দেশপ্রেম বনাম ফুটবল
বিশ্বকাপ বারবরই সৌন্দর্যের খেলা। কিন্তু মাঝে মধ্যেই কিছু বিতর্কিত কারণে বিশ্বকাপ তার সৌন্দর্য হারায়। বর্ণবাদ কিংবা জাতিগত আক্রোশ যুগে যুগে ফুটবলকে করেছে কলঙ্কিত। এবারের বিশ্বকাপেও বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। খেলাধুলাকে কখনো রাজনীতির সঙ্গে মেশাতে হয় না। কিন্তু গত শুক্রবার রাতে সার্বিয়া-সুইজারল্যান্ডের ম্যাচে তেমন কিছু নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
ওই ম্যাচে সার্বিয়া শেষ মুহূর্তের গোলে ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় সুইজারল্যান্ডের কাছে। সুইজারল্যান্ডের হয়ে গোল দুইটি করেন গ্রানিত জাকা ও জেরদান শাকিরি। বিশ্বকাপে গোল হবে, উদ্যাপনও হবে। তাতে কেনো সমস্যা নেই। কিন্তু তা যদি কোনো জাতির অনুভূতিতে আঘাত হানে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয় তা সত্যি ন্যক্কারজনক।
কালিনিনগ্রাদে শুক্রবার জাকা ও শাকিরির গোল করার পর দুই হাত ক্রস করে আঙুল নাড়িয়ে উদ্যাপন করেন। যা আলবেনিয়ান জাতীয় চিহ্ন জোড়া ঈগলকে নির্দেশ করে। এ ধরনের উদ্যাপনের পর সার্বিয়ার ফুটবল ফেডারেশন বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক ফিফার কাছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছে। সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তে নেমে পড়েছে ফিফা।
ফিফার আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী কোনো খেলোয়াড় রাজনৈতিক প্রচারণা চালাতে পারবে না। তবে এই দুই সুইস খেলোয়াড় এই নীতিভঙ্গ করেছেন এবং এতে তাদের দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই ধরনের অপরাধে সর্বনি¤œ শাস্তি ৩ হাজার ৮০০ পাউন্ড জরিমানা।
শাকিরি ও জাকা দুইজনই সুইজারল্যান্ডের হয়ে খেললেও মূলত তারা আলবেনিয়া ও কসবো বংশোদ্ভূত। বর্তমানে সার্বিয়া ও আলবেনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। নব্বই দশকের দিকে আলবেনিয়া ও কসবোর স্বাধীনতা যুদ্ধে সার্বিয়ান আর্মি নির্মম গণহত্যা চালায়। সে সময় শাকিরির বাবা আলবেনিয়ার পক্ষ নেওয়ায় তাকে কারাবাস করতে হয়। রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধের সময় শাকিরির পরিবার কসবো ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। জাকার পরিবারও আলবেনিয়া ছেড়ে আসেন। জন্মভূমি ছেড়ে এলেও হয়তো দেশের প্রতি ভালোবাসা তাদের রয়েই গেছে। তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে তাদের গোল উদ্যাপনে।
তবে খেলা শেষে শাকিরি বলেছিলেন, ‘এই উদ্যাপন আমার পরিবারের জন্য ছিল। যারা সব সময় আমাদের সমর্থন জোগায়। আর আমি আমার এ উদ্যাপন নিয়ে লজ্জিত নই।’ রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শাকিরি বলেন, ‘এটা কেনো রাজনৈতিক বার্তা ছিল না। আমি বিপক্ষ দলকে ইঙ্গিত করে উদ্যাপন করিনি।’
জয়ের পর জাকা বলেছিলেন, ‘এটা আমার জন্য সত্যিই বিশেষ একটা দিন। এই জয় সুইজারল্যান্ড, আলবেনিয়া ও কসবোর জন্য। আর এই উদ্যাপন আমার সব ভক্তদের জন্য। এটা কাউকে উদ্দেশ্য বা ব্যথিত করার জন্য নয়।’
তবে তাদের এমন আচরণে ব্যথিত সার্বিয়ান সমর্থকদের অভিযোগের আগুনে ঘিঁ ঢালেন আলবেনিয়ান প্রধানমন্ত্রী ইদি রামা তার টুইটারে একটি ছবি প্রকাশ করে। ছবিটিতে দেখা যায় শাকিরি তার ডান পায়ের বুটে কসবোর পতাকা লাগিয়ে মাঠে নেমেছিল। এবং তিনি লিখেন, ‘এই জয় তোমদের জন্যই। তোমরা কসবোর গর্ব।’
২৭ জুন সুইজারল্যান্ড মাঠে নামবে কোস্টারিকার বিপক্ষে। এই ম্যাচে সুইজারল্যান্ড শাকিরি ও জাকাকে মাঠে পাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
"