চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২৫ জুন, ২০১৮

দূষণে ধুঁকছে হালদা মরছে জলজপ্রাণী

শিল্প ও আবাসিক বর্জ্যরে দূষণে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প জাতীয় মাছের অন্যতম প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদী। দূষণে হালদায় কমেছে মাছের রেণু উৎপাদন। গত ১০ দিন ধরে হালদার বিভিন্ন অংশে ভাসছে মরা মাছ। এর আগেও সেখানে মারা গেছে বিরল প্রজাতির ডলফিন।

হালদার বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে গবেষণা চালায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও পরিবেশ অধিদফতরের একটি যৌথ দল। এতে দেখা যায়, নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার উপস্থিতির জেরে হালদায় মারা যাচ্ছে মাছ। গবেষণায় জানা গেছে, অ্যামোনিয়া বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে নদীর দূষণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হালদা দূষণের এ ধারা অব্যাহত থাকলে তার প্রভাব পড়বে আশপাশের জনজীবনেও। হালদা বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া জানান, হালদার যেসব স্পটে মাছ মারা যাচ্ছে সেসব স্থানে পানি পরীক্ষা করে দশমিক তিন থেকে দশমিক ছয় পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যদিও পানিতে এর সহনশীল মাত্রা ০.০২ পিপিএম। সেখানকার পানিতে পাওয়া গেছে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ১৪ থেকে ২৮ গুণ বেশি অ্যামোনিয়া। যা মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বন্যায় বিভিন্ন খালের পানি হালদায় এসে পড়েছে। ওইসব খালের অধিকাংশই আবাসিক, শিল্প ও ট্যানারির বর্জ্যে ভরা। ফলে পানিতে বেড়েছে অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি, কমেছে অক্সিজেন। যা হালদার মা মাছসহ সব ধরনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের অন্যতম কারণ। দূষণে হালদার দুই পাশের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমিও অনাবাদি হয়ে পড়ছে।’

হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য ও মাছের প্রজনন নিয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তত ১০টি কারণে প্রতিদিন দূষণের কবলে পড়ছে দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প জাতীয় মাছের অন্যতম প্রজননকেন্দ্র হালদা। এর মধ্যে রয়েছে, আবাসিক, শিল্প ও ট্যানারির বর্জ্যে প্রতিনিয়ত দূষণ, নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন নদীর তীরে একের পর এক গড়ে ওঠা ইটভাটায় নদীর মাটি ও পানির ব্যবহার, ফটিকছড়ির চা-বাগানগুলোর জন্য নদীর পানি ব্যবহার, নদীতে রাবার ড্যামের (বাঁধ) প্রতিবন্ধকতা, নদীর অন্তত ১১টি স্থানের বাঁক সমান করে ফেলা, নদীর তীরে তামাক চাষ ও যন্ত্রচালিত নৌযান থেকে তেলের নিঃসরণ।

এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে হালদায় গাঙ্গেয় প্রজাতির বিপন্ন ডলফিনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি পায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। সূত্র জানায়, হালদা পাড়ের শিল্পকারখানাগুলোর বেশির ভাগেরই ইটিপি (তরল বর্জ্য শোধনাগার) নেই।

হাটহাজারীর খন্দকিয়া, কাটাখালী, বাথুয়া, কৃষ্ণখালী, শাহ মাদারী ও চট্টগ্রাম নগরের বামনশাহী খাল বেয়ে বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালির বর্জ্য সরাসরি পড়ছে হালদায়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান অন্যান্য আবাসিক এলাকার মাস্টার ড্রেনটি বামনশাহী খালের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে বামনশাহী ও হাটহাজারীর কুয়াইশ খালের মাধ্যমে নগর ও হাটহাজারীর বিশাল এলাকার বর্জ্য হালদায় গিয়ে মিশছে।

শিল্পবর্জ্যরে জন্য স্থানীয়রা দায়ী করছেন নগরের মদিনা ট্যানারি, রওশন ট্যানারি ও রিফ লেদার, হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্ট, কেডিএস ডায়িং ও টিকে ডায়িং, ইব্রাহিম কটন মিল এবং এশিয়ান পেপার মিলের মতো প্রতিষ্ঠানকে। এসব প্রতিষ্ঠানের তরল বর্জ্য বিভিন্ন খাল হয়ে হালদায় পড়ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অন্যান্য আবাসিক এলাকার বর্জ্য প্রকল্পের মূল নালা হয়ে কুয়াইশ, কৃষ্ণখালী ও খন্দকিয়া খাল দিয়ে পড়ছে হালদায়।

হাটহাজারীর উত্তর ফতেয়াবাদ এলাকার কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নন্দীর হাটের এশিয়া প্যাসিফিক পেপার মিলস লিমিটেড ও জননী পেপার মিলস কারখানার সব বর্জ্য শাহ মাদারি খাল বেয়ে সরাসরি হালদায় মিশছে। এ ছাড়া হাটহাজারী সদরের হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্টের বর্জ্য চেঙখালি খাল হয়ে মিশছে হালদায়। নদীতে মিশে যাওয়ার আগে স্থানীয় খাল দিয়ে এসব বর্জ্য প্রবাহিত হয়, যা খুবই দুর্গন্ধযুক্ত। পানি এতই বিষাক্ত হয়েছে যে, হাঁস-মুরগি এসব খালে নামলেই মারা যায়। জমিতে এই খালের পানি ব্যবহার করা যায় না।’

মৎস্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক প্রভাতী দেব এ বিষয়ে বলেন, ‘নদীর পাড়ের কারখানার বর্জ্যে কর্ণফুলীর দূষণের প্রভাব পড়ছে হালদায়। কর্ণফুলীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ তিনের নিচে।’ চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক জানান, দ্রবীভূত অক্সিজেন ৪ দশমিক ৫-এর নিচে নামলে তাতে জলজ প্রাণী বাঁচে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist