নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ জুন, ২০১৮

শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সংলাপ

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো দাবি

সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণ কিছুটা বাড়ালেও তা যথেষ্ট নয়। নারীর ক্ষমতায়ন ও সমাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ওইসব প্রতিষ্ঠানে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রথাগত আইন বিশ্লেষণের মাধ্যমে বৈষম্যমূলক উপাদান চিহ্নিত করে তা অপসারণে সার্কেল চিফ ও সিএইচটি মন্ত্রণালয়কে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে ২০১১ সালের জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও পার্বত্য শান্তি চুক্তির আলোকে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী নারীর অংশগ্রহণ : বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যত করণীয়’ শীর্ষক এক জাতীয় পরামর্শ সভায় তারা এ দাবি জানান।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), কাপেং ফাউন্ডেশন, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, উইমেন হেডম্যান কারবারী নেটওয়ার্ক, সিএইচটি উইমেন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম, প্রগেসিভ, অনন্যা কল্যাণ সংগঠন ও খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পরামর্শ সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা। বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল প্রধান ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন মং সার্কেল প্রধান রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) রমা রাণী রায়। আলোচনায় অংশ নেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. আইনুন নাহার, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, বিএনপিএসের উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি সোমা দত্ত, সিএইচটি নেটওর্য়াকের সদস্য থুয়াই ইয়ং মারমা, অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ড. নই প্রু নেলী, খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা, সিএইচটিনারী হেডম্যান কারবারীর আহ্বায়ক জয়া ত্রিপুরা, কারবারী সান্ত¡Íনা খিসা চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সচিব শান্তি বিজয় চাকমা, কাপেং ফাউন্ডেশনের সোহেল হাজং প্রমুখ।

সভায় চাকমা সার্কেল প্রধান রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, কিছু নারী মূল দায়িত্বে আসলেই নারীর ক্ষমতায়ন হয় না। আদিবাসী নারীদের অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করতে আইন করতে হবে। ক্ষমতা কাঠামোতে আদিবাসীদের জন্য কোটা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। আর ভূমি বণ্টন ও কেনাবেচার ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী বলেন, মং সার্কেলে নারী হেডম্যান-কারবারী নিয়োগ হলেও তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের সক্ষমতা বাড়ছে না। বিচার প্রক্রিয়ায় মং সার্কেলে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। মারমা বিবাহের রেজিস্ট্র্রেশনের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তবে এব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা কম বলে তিনি দাবি করেন। অতিরিক্ত সচিব রমা রাণী রায় বলেন, সব প্রথাগত আইনই যুগোপযোগী করতে হবে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকেই প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা ক্ষেত্রে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তসহ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য বিভিন্ন সার্কেলের প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে নারীদের ক্ষেত্রে বিদ্ধমান বাধা অপসারণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, সব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। মূল প্রবন্ধে সুস্মিতা চাকমা বলেন, অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মতো আদিবাসী সমাজের নারীদের অধস্তন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ অধস্তনতার বেড়াজাল ছিন্ন করে এ সময়ে যেসব নারী হেডম্যান ও কারবারী পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, পুরুষতান্ত্রিক বলয়ে তাদের প্রতিনিয়ত নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

অধ্যাপক আইনুন নাহার বলেন, সমাজের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দূর করতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, আদিবাসী সমাজব্যবস্থায় পিতৃতান্ত্রি¿কতা আরো কঠোর। এই ব্যবস্থার অবসান হওয়া দরকার। মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান বলেন, গত পাঁচ বছরে নারী হেডম্যান কারবারী সংখ্যা বেড়েছে।

পার্বত্য নারী নেত্রী ড. নাই প্রু নেলী বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের রাজপরিবারগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। যোগ্য নারীদেরকে হেডম্যান-কারবারী নিয়োগ করতে হবে। সরকারি রাজনৈতিক দলের নেতারা যেন হেডম্যান-কারবারীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist