এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী
রাজশাহী-ঈশ্বরদী
ট্রেনে হিজড়াদের চাঁদাবাজি
রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে চলছে হিজড়াদের চাঁদাবাজি। এ অঞ্চলে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে প্রতিদিনই হাজারো মানুষ হিজড়াদের কবলে পড়ছেন। এখন ঈদ উদ্্যাপনের পর ফিরতি যাত্রীদের কাছে চালানো হচ্ছে চাঁদাবাজি। হিজড়াদের এই চাঁদাবাজিতে নির্বাক পুলিশ-প্রশাসন। এ কারণে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে হিজড়াদের দলগুলো। তবে এই চাঁদার অর্ধেক টাকা পুলিশ প্রশাসনের কারো কারো পকেটে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ চাঁদা আদায় করতে গিয়ে ট্রেনের মধ্যে হিজড়ারা যাত্রীদের সঙ্গে মারামারিতেও জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কাছে যাত্রীরা অনেকাংশেই অসহায়।
বিভিন্ন ট্রেনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ‘এ্যাই পাঁচ টাকা দে, না দিলে ... ধরব।’ এমনই কিছু অশ্লীল কথা আর কার্যকলাপ দিয়ে শুরু হয় হিজড়াদের চাঁদাবাজি। আর তাদের মূল লক্ষ্য হলো যুবকরা। ছাত্র, চাকরিজীবী কিংবা শ্রমিক। হিজড়াদের এসব অশ্লীলতা থেকে ছাড় পান না কেউই। সম্মান বাঁচাতে যাত্রীরা যেন যত দ্রুত সম্ভব তাদের টাকা দিয়ে দম নেন।
গত বুধবার সিল্ক সিটি ট্রেনে বসে আছে রাজশাহীর নগরীর বহরমপুরের বাসিন্দা সাইদুর রহমান। প্রথমে তার কাছে হিজড়া রোকেয়া চাইল ১০০ টাকা। দিতে অসম্মতি জানালে রোকেয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ডাকল অশ্লীল নামধারী অপর সহযোগিকে। তারপর একজোট হয়ে সাইদুরের মাথার টুপি খুলে নিল। তখন সাইদুর টুপি তাদের কাছ থেকে নিতে চাইলে চেঁচিয়ে উঠে সাইদুরের শরীরের ওপর উঠে বসে গেল এক হিজড়া। তারপর শুরু করল নোংরামি। তখন বাধ্য হয়ে ১০০ টাকা বের করে দিল সাইদুর। কিন্তু সন্তুষ্টি নয় তারা। কারণ, এই ১০০ টাকা বের করতে অনেক সময় লেগেছে। তাই এবার দাবি করে বসল ৫০০ টাকা। না দিলে প্রথমে হুজুরকে ন্যাংটা করে নিজেরাও তা করবে এমন ভঙ্গি শুরু করতেই দাবিকৃত ৫০০ টাকা দিতে বাধ্য হলো সাইদুর। এদিকে, টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাল রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিব। আসল হিজড়া রোকেয়া, এ্যাই টাকা দে, আমরা কিন্তু ... বলে অশ্লীলতা শুরু করে রোকেয়া। অন্য যাত্রীরা রোকেয়া হিজড়াকে নিষেধ করলে গালি দেওয়া শুরু করে সে। এরপর বাধ্য হয়েই টাকা দিতে রাজি হয় হাবিব। এমন হাজারো ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। রাজশাহী থেকে চার নম্বর স্টেশন সরদহ রোডে নেমে গেল রোকেয়া হিজড়া ও তার সহযোগীরা।
আসল সুইটি হিজড়ার দল। আবারও প্রতি বগিতে গিয়ে সেই একই কথা। ‘এ্যাই! টাকা দে, ঈদ বোনাস দে।’ তখন রাজশাহীর হিজড়াদের টাকার দেওয়ার পরও আবার কেন টাকা দিব এমন প্রশ্নের জবাবে সুইটির জবাবও চাঙ্গা। ‘রাজশাহীতে টাকা দিলে কি আমার পেটের ভাত হবে? দে বার কর। টাকা বের কর আমার হাতে সময় নাই।’ ?এমনভাবে চাঁদা তুলতে তুলতে পৌঁছল আব্দুলপুর জংশন। এরপর নেমে যায় সুইটি ও তার সহযোগীরা। আব্দুলপুর থেকে ঈশ্বরদী আবারও আরেকটি দল। জানা গেছে, রাজশাহী থেকে কাঁকন হাট, রাজশাহী থেকে সরদহ রোড, সরদহ রোড থেকে আব্দুলপুর, আব্দুলপুর থেকে ঈশ্বরদী এভাবে চুয়াডাঙ্গা এবং হিলি বা ঢাকা রুটে প্রতি দুই স্টেশন পরপর চলে হিজড়াদের চাঁদাবাজি। তাদের নিজস্ব দল এবং নির্দিষ্ট এলাকা রয়েছে যে এলাকার বাইরে কেউ প্রবেশ করে না।
মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিটি বলেন, হিজড়াদের এসব কর্মকান্ড থামানো যায় না। আমরা কিছু করতে পারি না। ওরা আমাদের ভয় পায় না।
রাজশাহী রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাঈদ ইকবাল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমার থানার ৪২ সদস্যের মধ্যে সকলেই বিভিন্ন জায়গায় কর্তব্যরত থাকেন। তবে প্রতি ট্রেনে মাত্র তিনজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করায় তারা হিমশিম খাচ্ছেন। হিজড়াদের সঙ্গে পুলিশের কোনো সখ্য নেই বলেও দাবি করেন ওসি।
দিনের আলো হিজড়া সংগঠনের রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি মোহনা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমরা ট্রেনে টাকা তোলার পক্ষে নই। আমাদের শহরের স্থানীয় কোনো সদস্য এই কাজে জড়িত না। বাইরের হিজড়ারা এসব কর্মকান্ড পরিচালনা করে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তারা পেটের দায়ে অসহায় এবং বাধ্য হয়েই এ কাজে নেমেছে। আমাদের লিঙের সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে কেউ কোনো অন্যায় কাজে জড়াবে না বলেও জানান মোহনা।
"