গাজী মো. রাসেল
অনন্য রাফায়েল মার্কুয়েজ
বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে গোটা দুনিয়া। তাতে মাঝে মাঝে একটা ঝাঁকুনিও পড়ে বিশ্বকাপে ঘটন-অঘটন এবং একের পর এক রেকর্ডে। অঘটনের শুরু হলো রবি রাতে। বিশ্বকাপের তৃতীয় দিনে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ১-০ গোলে হারিয়ে আনন্দে ভেসেছে উত্তর আমেরিকার প্রতিনিধি দল মেক্সিকো। এই জয় মেক্সিকানদের ফুটবল ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তবে মেক্সিকান তারকা ফুটবলার রাফায়েল মার্কুয়েজের জন্য ম্যাচটা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকল। এদিন অনন্য এক রেকর্ড গড়ে ফেললেন এই ডিফেন্ডার। সর্বোচ্চ পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলার অনবদ্য এক কীর্তির মালিক হয়ে গেলেন তিনি। তার আগে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলার কীর্তিটা আছে মাত্র দুইজনের। একজন এবার মার্কুয়েজের পূর্বসূরি অ্যান্তনিও কারবাহাল ও জার্মান কিংবদন্তি লোথার ম্যাথুসের। ১৭ জুন তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে এই এলিট ক্লাবে ঢুকে পড়েছেন বার্সেলোনার সাবেক ফুটবলার।
রোববার মেক্সিকোর প্রথম ম্যাচেই প্রতিপক্ষ হট ফেভারিট জার্মানি। ওই ম্যাচে ল্যাঙ্গারের একমাত্র ও জয়সূচক গোলেই ইতিহাস গড়ে মেক্সিকানরা। বিশ্বকাপের মঞ্চে জার্মানদের বিপক্ষে প্রথম জয়ের ইতিহাসটা হয়ে গেল তাতেই। ৭৪ মিনিটে মাঠে নামেন মার্কুয়েজে। তিনি মাঠে নামার পর মেক্সিকান রক্ষণভাগ যেন আরো চোয়ালবদ্ধ হয়ে উঠেছিল। শক্তিশালী মেক্সিকোর দেয়ালটা শেষ পর্যন্ত ভাঙতে পারেননি মুলার-রিউস-ক্রুসদের মুহুর্মুহু আক্রমণ। ১৯৯৭ সালে মেক্সিকো ফুটবল দলে যোগ দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত খেলে যাচ্ছেন ৩৯ বছর বয়সী এই তারকা। তার স্বপ্নপূরণের উপলক্ষ হয়ে আসে ২০০২ সালের জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপটা। এরপর ২০০৬, ২০১০, ২০১৪ সবশেষ তিনটি বিশ্বকাপেই মেক্সিকানদের স্বপ্নযাত্রায় ছিলেন এই মেক্সিকান। চলমান রাশিয়া বিশ্বকাপ তার জন্য পঞ্চম ও শেষ বিশ্বকাপ হয়ে এলো। শেষটা রাঙাতে তিনি কতটা মরিয়া সেটা আধ ঘণ্টা খেলেই বুঝিয়ে দিয়েছেন মার্কুয়েজ।
২০০২ সালের বিশ্বকাপে মার্কুয়েজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ওপর দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে মেক্সিকো। যদিও ওই আসরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-০ গোলে হেরে কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই বিদায় নিতে হয় মার্কুয়েজ বাহিনীকে। গত ১৬ বছরে বিশ্বকাপে এটাই হয়ে থাকল মেক্সিকানদের সর্বোচ্চ অর্জন।
বার্সেলোনার সাবেক ডিফেন্ডার মার্কুয়েজের মূল কাজ নিজেদের বিপদসীমা আগলে রাখা। এর পাশাপাশি আগের চারটি বিশ্বকাপে ৩টি গোলও করেছেন তিনি। এর মধ্যে ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে করা তার গোলটি বহু বছর স্মরণীয় হয়ে থাকবে মেক্সিকানদের কাছে।
জাতীয় দলের জার্সিতে সর্বমোট ১৯টি গোল করেছেন মেক্সিকান তারকা। জাতীয় দলের জার্সিতে তার অভিষেক হয়েছিল ১৯৯৯ সালে ফিফা কনফেডারেশন কাপে। মার্কুয়েজের অভিষেক আসরেই মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মেক্সিকো। এছাড়া মার্কুয়েজের নেতৃত্বে ২০০৩ ও ২০১১ সালে কনকাকাফ গোল্ড কাপ ট্রফি জিতেছিল মেক্সিকো।
মার্কুয়েজে ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন। এই সাত বছরের অধ্যায়ে চারবার লা লিগা, দুইবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন তিনি। তার ব্যক্তিগত রেকর্ডে রয়েছে ২০০১ সালে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের বর্ষসেরা ডিফেন্ডারের পুরস্কার এবং ২০০৫ সালে কনকাকাফ গোল্ড কাপ টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলারের খেতাবও জিতে নেন তিনি। দুই বছর পর ‘ফ্রি-কিক মাস্টার’ খ্যাতিও পেয়ে যান মেক্সিকো ফুটবলের স্বপ্নসারথি।
"