ক্রীড়া ডেস্ক

  ১৯ জুন, ২০১৮

রূপকথার আইসল্যান্ড

বিশ্বকাপ অভিষেকের পর থেকেই আইসল্যান্ড-বন্দনায় মাতোয়ারা বিশ্ব। ফুটবলের সর্ববৃহৎ আসরের প্রথম ম্যাচেই দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে রুখে দেওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! খোদ লিওনেল মেসির ভক্ত-সমর্থকরাই যেমন পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেওয়া দলটির গোলরক্ষক হ্যানেস হাটডরসনকে জানতে গুগল সার্চের দ্বারস্থ হয়েছেন লক্ষাধিক বার!

ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেওয়া এই ফুটবল দলটিকে নিয়ে জানার যেন শেষ নেই। অথচ খালি চোখে দেখতে মসৃণ এই দলটাকে আজ অধিষ্ঠিত স্থানে পৌঁছতে যে কত-শত ঝড়-ঝাপ্টা আর অমসৃণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, তা অনেকের কাছে অজানাই রয়েছে গেছে এখনো।

চলুন রূপকথার দেশ আইসল্যান্ড ফুটবল দলের উত্থান আর মজার মজার সব অজানা তথ্য জেনে নিই :

* আইসল্যান্ডের কোচ হেইমির হাটগ্রিমসন পেশায় একজন চিকিৎসক। ২০১৬ সাল নাগাদ তিনি গ্রামের বাসিন্দাদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ছিলেন। দেশের ফুটবলের হাল ধরতেই তিনি কোচিং করাতে শুরু করেন।

* ২০১১ সালে হাটগ্রিমসনকে জাতীয় দলের সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অব আইসল্যান্ড (কেএসআই)। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই ভাঙাচোরা দলটাকে ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে-অফে তুলেন।

* দেশটির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তার কোচিংয়ে সন্তুষ্ট হয়ে ২০১৩ সালে পদোন্নতি দেয়। হাটগ্রিমসন হয়ে যান আইসল্যান্ডের হেড কোচ। এরপর ২০১৬ ইউরো বাছাই পেরিয়ে মূলপর্বে জায়গা করে নেওয়া, ২০১৬ ইউরোতে রূপকথা রচনা করে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখা, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চে পা রাখা, সবশেষ বিশ্বকাপ অভিষেকেই মেসির আর্জেন্টিনাকে রুখে দেওয়া। রূপকার হাটগ্রিমসনের রূপকথা রচনা চলছেই।

‘কী বলব বা কী বলা উচিত সত্যিই জানি না। শুধু এটুকু জানি, যা কিছু ঘটে গেল সব অবিশ্বাস্য। ভাবতে অবাক লাগছে, ‘পেলে, ম্যারাডোনা, গুনারসন (আইসল্যান্ড অধিনায়ক).....!’ দেশকে বিশ্বকাপে তোলার পর আনন্দের আতিশয্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলা হাটগ্রিমসনের বিখ্যাত সেই উক্তি ভুলে যাননি নিশ্চয়!

* বিশ্বের ক্ষুদ্রতম জাতিগোষ্ঠী হিসেবে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে আইসল্যান্ড। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর গর্ভের এই দেশটির জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে ৩ লাখ!

* আইসল্যান্ডের ভূমি অমসৃণ হওয়ায় সেখানে সমতল খেলার মাঠ বানানো ভীষণ কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। দেশটি বছরে অন্তত ৭ মাস বরফে ঢাকা থাকে।

প্রাকৃতিক সমস্যায় জর্জরিত আইসল্যান্ডে একটা সময় কোনো ফুটবল স্টেডিয়াম ছিল না, ছিল না ফুটবলারদের অনুশীলনের উপযুক্ত স্থান।

অবশেষে ২০০০ সালে দেশটির জনগণ ফুটবলের কল্যাণে নিজ অর্থায়নে ট্রেনিং গ্রাউন্ড (স্থানীয়দের নিকট সকার হাউস নামে পরিচিত) নির্মাণের ব্যবস্থা করে দেয়। ফুটবলাররা যাতে তুষারপাতেও অনুশীলন করতে পারে, সেজন্য ছাদ ঢাকা (ইনডোর) স্টেডিয়াম তৈরিতেও নিজেদের উপার্জিত অর্থ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের হাতে তুলে দেয়। এমনকি তাদের জাতীয় স্টেডিয়াম লেইগার্ডডাল্সভেটলুরের আধুনিকায়নেও অর্থায়ন করেছে দেশটির সাধারণ মানুষ।

আইসল্যান্ডের অধিকাংশ খেলোয়াড়ের নামের শেষ অংশে ‘সন’ রয়েছে। আইসল্যান্ড ফুটবল দলকে বলা হয় ‘ভাইকিংস অব আটলান্টিক’ বা আটলান্টিকের জলদস্যু। আর তাদের উদ্যাপনকে বলা হয় ‘ভাইকিং ক্ল্যাপস’ (জলদস্যুদের করতালি)।

২০১৬ ইউরো কাপে আবির্ভূত হয়েই দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিল স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশটির ফুটবলাররা। খেলাটির জনক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে।

ওইদিন ইংলিশদের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে মাথার ওপর দুই হাত তুলে ছন্দে ছন্দে তালি বাজানোর এক ‘অপ্রতিম উদ্যাপন’ করে ভাইকিংসরা। সেই উদ্যাপনটাই ‘ভাইকিং ক্ল্যাপস’ নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে। মনে হয় কিছু একটা বাদ পড়ে গেল! হ্যাঁ, মেসির পেনাল্টি রুখে দেওয়া সেই গোলরক্ষককে নিয়ে জানতে চান, তাইতো?

একসময় পেটের দায়ে ভৌতিক সিনেমা (হরোর মুভি) বানাতেন গোলরক্ষক হাটডরসন। কালের বিবর্তনে সেই চলচ্চিত্র নির্মাতা এখন আইসল্যান্ডবাসীর চোখের মণি!

সত্যিই রূপকথার দেশের ফুটবলের এগিয়ে চলার গল্পটাও রূপকথার মতোই অদ্ভুত সুন্দর। উত্থানের সেই সোপানে চড়ে আইসল্যান্ড আজ বিশ্ব ফুটবলের এক উঠতি শক্তি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist