নিজস্ব প্রতিবেদক
সরগরম সদরঘাট
শিমুলিয়া কাঁঠালবাড়ি পাটুরিয়া শান্ত
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ার চেষ্টায় মরিয়া মানুষের পদভারে সরগরম সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। ঈদের ছুটি শুরুর আগেরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। বিকাল থেকে শুরু হয় রীতিমত জন¯্রােত। টার্মিনাল কর্মীদের যাত্রীদের ঢল সামাল দিতে গলদঘর্ম হতে হয়।
এদিকে পদ্মা পাড়ি দিতে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে শিমুলিয়া ফেরিঘাটে। আর কাঁঠালবাড়ি ঘাটও ব্যস্ত ঘরমুখো মানুষের পদচারণায়। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুট এবার শান্ত। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায়, চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলো লালকুঠি ঘাট, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, নোয়াখালী ও পিরোজপুরের লঞ্চ প্রধান টার্মিনাল আর পটুয়াখালীর লঞ্চগুলো ওয়াইজঘাট টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) হুমায়ন কবির জানান, সবগুলো টার্মিনালেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন জায়গা থেকে লঞ্চগুলো ঘাটে আসামাত্রই ভরে যাচ্ছে যাত্রীতে। কোথাও তিল ঠাঁই নেই।
যাত্রীদের নিরাপত্তায় সদরঘাটে ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মওদুদ হাওলাদার। ২৬১ জন পুলিশ সদস্য পালা করে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নিরাপত্তায় কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া নৌপুলিশ, ঢাকা মহানগর পুলিশ, কোস্ট গার্ড, র্যাব সদস্যরাও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। খোলা হয়েছে বিআইডব্লিউটিএ ও মন্ত্রণালয়ে তিনটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। পুরো সদরঘাটকে আনা হয়েছে সিসি ক্যামেরার আওতায়। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন। এছাড়া পালা করে দায়িত্ব পালন করছেন কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পদ্মা পাড়ি দিতে ঘরমুখো মানুষের ঢল এখন শিমুলিয়া ফেরিঘাটের দিকে। সকাল থেকেই ফেরিঘাটে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীবাহী বাড়তি পরিবহনের চাপ ছিল। ফেরিঘাটে আটকে ছিল শত শত যানবাহন। প্রচ- গরম উপেক্ষা করেই শিমুলিয়া চৌরাস্তা থেকে লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট ও স্পিডবোট ঘাটে পায়ে হেঁটে প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তা যেতে চরম দুর্ভোগে পড়েন শত শত বাসযাত্রী।
মাওয়া বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) খন্দকার খালিদ নেওয়াজ জানান, সকালের দিকে ফেরিঘাটে একসঙ্গে অনেক ছোট গাড়ি আসায় যানবাহনের চাপ বেশি ছিল। বেলা বাড়লে চাপ আরো বাড়তে থাকে।
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, ভোরের আলো না ফুটতেই কাঁঠালবাড়ি ঘাট ব্যস্ত হয়ে ওঠে ঘরমুখো মানুষের পদচারণায়। লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিতে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে নামছে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে।
বিআইডবিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানায়, প্রতিটি লঞ্চ, স্পিডবোট, ফেরিতেই ছিল যাত্রীদের চাপ। আবহাওয়া কিছুটা খারাপ থাকায় লঞ্চের পাশাপাশি ফেরিতেও যাত্রীরা পার হচ্ছে। বর্তমানে এ নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ, ২ শতাধিক স্পিডবোট ও ১৯টি ফেরি যাত্রী সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।
কাঁঠালবাড়ি লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন জানান, সকাল থেকেই যাত্রীরা ফিরতে শুরু করলেও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার সুযোগ নেই। নির্বিঘেœই যাত্রীরা কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এসে নামছে।
কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম মিয়া জানান, ফেরিতে তেমন চাপ নেই। ফলে অনেকটা পরিবহনশূন্য ফেরি শিমুলিয়া যাচ্ছে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান আহমেদ জানান, ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়ছে। র্যাব, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, ভ্রাম্যমান আদালতের টিম সার্বক্ষণিক ঘাট এলাকায় রয়েছে। তাছাড়া কোনো পরিবহন যেন বাড়তি ভাড়া না নেয় সেদিকেও দৃষ্টি রয়েছে।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপ নেই পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুট। যানবাহনের চাপে প্রতিবছর সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত পাটুরিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্টে অপেক্ষা করতে দেখা যায় মাত্র তিনটি পণ্যবাহী ট্রাকের। বাসের চাপ কম থাকার কারণে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে।
সরেজমিনে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের ধামরাই উপজেলার বারবাড়িয়া থেকে পাটুরিয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজট দেখা যায়নি। মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহনের চাপ কম থাকলেও অতিরিক্ত চাপ দেখা যায় যাত্রীবাহী লোকাল বাসে।
পাটুরিয়া ফেরিঘাটে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের উপ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘাটে অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের চাপ নেই। ঘাটে আসা মাত্রই যানবাহনগুলো নৌরুট পার হচ্ছে। এ নৌরুটে সব মিলিয়ে ১৯টি ফেরি চলাচল করছে।
"