জাহিদুল ইসলাম

  ১১ জুন, ২০১৮

সম্ভাবনাময় তারকাবহুল স্পেন

বিশ্ব ফুটবলের নতুন পরাশক্তি হচ্ছে স্পেন। রাশিয়া বিশ্বকাপের শিরোপার অন্যতম দাবিদারও তারা। সাবেক কোচ ভিসেন্তে দেল বক্সের হাত ধরে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে লা রোজারা। ২০০৮ থেকে দুর্দমনীয় দলটি জিতেছিল টানা দুইটি ইউরো চ্যাম্পিয়নসশিপ। মাঝখানে ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো উঁচিয়ে ধরেছিল বিশ্বকাপের শিরোপা।

ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির মতো যেকোনো ফুটবল জায়ান্টদেরকে হারিয়ে দেওয়ার সামর্থ রাখে স্প্যানিশরা। বিশ্বকাপের আগে প্রীতি ম্যাচগুলোতে সেই আভাসটাই দিয়ে রেখেছে হুলেন লোপেতেগির শিষ্যরা। শেষ সাক্ষাতে জার্মানির বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল দেশটি। এবার টানা ২০ ম্যাচ অপরাজিত থেকে রাশিয়া বিশ্বকাপের মিশন শুরু করবে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

স্পেনের এটি ১৫তম বিশ্বকাপ। লা রোজার প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিল ১৯৩৪ ইতালি বিশ্বকাপে। প্রথম বিশ্বকাপে ফিফার আমন্ত্রণ পেলেও অংশগ্রহণ করেনি দেশটি। এরপর ইতালি বিশ্বকাপে এসেই নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছিল তারা। সেবার স্পেন বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। পরের আসরে খেলার যোগ্যতা থাকলেও নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল তারা। তবে ১৯৫০ বিশ্বকাপে ফিরে এসেই আরেকবার চমক জাগানিয়া পারফরম্যান্স করে স্পেন। মিশন শেষ করে চতুর্থ হয়ে। এরপরই শুরু হয় স্পেন ফুটবলের কালো অধ্যায়। ইউরোপের বাছাইপর্ব পার হতে না পারায় টানা দুই বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকতে হয় তাদের। ফিরে এসে ১৯৬২ ও ১৯৬৬ বিশ্বকাপ খেললেও গ্রুপ পর্বের বাধা টপকাতে পারেনি দলটি। পরে আরো দুই বিশ্বকাপে বসে থাকতে হয়।

নিজেদের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে স্পেন ধারাবাহিকভাবে খেলতে থাকে ১৯৭৮ আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ থেকে। এরপর থেকে আর একবারও দর্শক হতে হয়নি লা রোজাদের। তবে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে দলটি শ্রেষ্ঠ সাফল্য পায় ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে। ফাইনালে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার শেষ মুহূর্তের গোলে নেদারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব জিতে স্প্যানিশরা।

২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে আসে স্পেন। কিন্তু ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার ইতিহাসটা অনেক পুরনো। অবশেষে সেই পথেই হাঁটতে হয় তৎকালীন দেল বস্কের শিষ্যদের।

যুগে যুগে স্পেন অনেক কিংবদন্তি ফুটবলারের জন্ম দিয়েছে। যাদের মধ্যে আছেন আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, রাউল গঞ্জালেস, ফার্নান্দো মরিয়েন্তেস, জুবিজারেতো, ফার্নান্দো হিয়েরো, লুইস সুয়ারেজ মেরোমন্সে, লুইস গার্সিয়ার মতো ফুটবলার। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ স্পেনকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেননি। সেই ক্ষুধার আগুনটা নিভিয়েছিল জাভি হার্নান্দেজ, ইকার ক্যাসিয়াস, ডেভিড ভিয়া, কার্লোস পুয়োল, ইনিয়েস্তার মতো কিংবদন্তি ফুটবলাররা।

স্পেনের এই সোনালি যুগের প্রতিনিধিরা জিতেছেন বিশ্বকাপ এবং টানা দুইটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ (২০০৮ ও ২০১২)। তাছাড়া ২০১৩ সালে কনফাডেরেশন কাপের ফাইনালও খেলেছিল দলটি। চার বছরের ব্যবধানে সেই সোনালি যুগের অনেকে ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন। দলে এসেছে নতুন মুখ। তার সঙ্গে আছেন ইনিয়েস্তো, সার্জিও রামোস, জেরার্ড পিকেদের মতো তারকা খেলোয়াড়রা।

স্পেনকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া ইনিয়েস্তার এটি শেষ বিশ্বকাপ। সদ্য বিদায়ী মৌসুমে ‘দ্য ইল্যুসনিস্ট’ বিদায় জানিয়েছেন বার্সেলোনাকে। আসন্ন বিশ্বকাপে ইনিয়েস্তা কেবল স্পেনের নয়, বিশ্বকাপ মঞ্চেরও শ্রেষ্ঠ তারকাদের একজন। বলতে গেলে লা লিগার কল্যাণে স্পেনের সব খেলোয়াড় তাদের তারকাখ্যাতিতে ছাড়িয়ে যাবেন অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের। দলে আছেন বিশ্বসেরা গোলরক্ষকদের একজন ডেভিড ডি গিয়া, তরুণ ফরওয়ার্ড মার্কো আসানসিও, ইস্কো, ডেভিড সিলভা, সার্জিও বুসকেটসদের মতো বিশ্বমানের তারকারা।

আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দলে এবার রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলার আছেন ৭ জন। আর বার্সেলোনার ৫ জন। গত বিশ্বকাপে দেল বস্ক ঠিক তার উল্টোভাবে দল সাজিয়েছিলেন। গত মাসেই স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ লিভারপুলকে হারিয়ে টানা তিন ও ১৩ তম চ্যাম্পিয়ন লিগের শিরোপা জিতেছে। বলতে গেলে, ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপার স্বাদ নিয়ে বিশ্বকাপের মিশনে নামবে স্পেন।

স্পেন আজকের অবস্থানে আসার পেছনে অবদান আছে তাদের ঘরোয়া ক্লাবগুলোর। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দুইটি ক্লাব, রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার অবস্থান স্পেনেই। যেখাবে খেলেন গ্রহের দুই শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সেই সঙ্গে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, ভ্যালেন্সিয়া, সেভিয়া, ভিয়ারিয়ালের মতো ক্লাবগুলোকে বলা যায় বিশ্বমানের খেলোয়াড় তৈরির কারখানা। সম্প্রতি প্রকাশিত ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০তম অবস্থানে আছে স্পেন।

রাশিয়া বিশ্বকাপে স্পেন খেলবে স্বদেশি কোচ হুলেন লোপেতেগির অধীনে। খেলোয়াড়ি জীবনে লোপেতেগি খেলতেন গোলরক্ষক হিসেবে। স্পেনের জাতীয় দলের জার্সিতে একটি ম্যাচ খেলারও অভিজ্ঞতা আছে তার। ২০১৬ সাল থেকে দলটির দায়িত্বে আছেন তিনি। তার অধীনে একটি ম্যাচেও হারেনি স্প্যানিশরা। মাঠে দলটির নেতৃত্ব দিবেন রামোস। সদ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা এই রিয়াল অধিনায়ক স্পেনকে দ্বিতীয় শিরোপা এনে দিতে পারেন কি না, তাই এখন দেখার বিষয়। সম্প্রতি প্রকাশিত ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০তম অবস্থানে আছে।

স্পেন শিরোপা পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে ১৫ জুন পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ফুটবলমোদীদের কাছে ম্যাচটি আইবেরিয়ার ডার্বি নামেও পরিচিত। ‘বি’ গ্রুপে স্প্যানিশদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ হচ্ছে মরক্কো ও ইরান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist