উপল বড়ুয়া

  ১০ জুন, ২০১৮

শিরোপায় চোখ ফ্রান্সের

বিশ্বের বুকে ফ্রান্স পরিচিত ছবি আর কবিতার দেশ হিসেবে। এক সময় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সব কবি-চিত্রকরদের জন্ম দিয়েছে এই দেশটি। শার্ল বোদল্যায়ার, আঁতুড় র্যাঁবো, গ্রিয়ম অ্যাপোলিনিয়র, রেনে দি কাঁদু, আঁরি মিসো, মালার্মে, পল ভার্লেন, জ্যাঁ পল সাত্রে, ভলতেয়ারের মতো বিশ্ববিখ্যাত কবি ও দার্শনিকদের পদচারণায় একসময় মুখর থাকত প্যারিস। তেমনি পাবলো পিকাসো, পল গঁগ্যা, অঁরিও মাতিস, দেগা, মানে, রেনোয়াদের মতো সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চিত্রকররা রাত দিন মাতিয়ে রাখতেন ফ্রান্সের রেস্তোরাঁ আর ক্যাফেগুলো।

পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটিকে বলা হয় শিল্পের আঁতুড়ঘর। কেবল শিল্পী-সাহিত্যিকদের নয়; ফ্রান্সের উর্বর ভূমি জন্ম দিয়েছে মিশেল প্লাতিনি, জাস্ট ফন্টেইন, লিলিয়ান থুরাম, দিদিয়ের দেশম, জিনেদিন জিদান, থিয়েরি অঁরিদের মতো কিংবদন্তি ফুটবলারদের। ফরাসিদের বিখ্যাত ওয়াইন ও সিনেমার কথা না হয় আজ বাদ থাক, বলা যাক তাদের নান্দনিক ফুটবলের গল্প।

১৯০৪ সালে বিশ্ব ফুটবলের উন্নতির লক্ষ্যে যে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা (ফিফা) গঠিত হয় তার মূল অবদানটা ছিল ফরাসিদের। প্যারিসেই স্থাপিত হয় সংস্থাটির সদর দফতর। ফিফার অধীনেই ১৯৩০ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। ফ্রান্স তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বকাপে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি। বাদ পড়ে গ্রুপ পর্ব থেকে। কিন্তু একটা ইতিহাস তারা ঠিকই লিখে ফেলেছিল। ১৩ জুলাই উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওতে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স ও মেক্সিকো। অভিষেক ম্যাচটি ফরাসিরা জিতে নেয় ৪-২ গোলে। এরপর ১৯৩৮ বিশ্বকাপটা নিজেদের ঘরেই আয়োজন করে দেশটি। এবার আশা জাগিয়েও ফরাসিরা ঘরে ফিরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে।

১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপ মঞ্চে ফরাসিদের বড় সাফল্য ছিল দুইবার সেমিফাইনাল খেলা। আসা-যাওয়ার মাঝে দেশটি ১৯৫৮ ও ১৯৮৬ বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ তৃতীয় স্থান দখল করেছিল। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর তো বাছাই পর্ব পার হতে না পারায় টানা দুই বিশ্বকাপ দর্শক হয়েই থাকতে হয় তাদের। এরপরই ফরাসিরা অপেক্ষা করতে থাকে একজন মহানায়কের। যিনি দেশকে এনে দেবেন বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব।

ব্লুজরা অপেক্ষাটা ঘুচায় ১৯৯৮ সালে। সেবার দ্বিতীয়বারের মতো ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো আর্থে’র আয়োজন করে ফরাসিরা। ১৯৯৬ সালে ইউরো কাপের সেমিফাইনাল খেলা দলটি ফেভারিট হিসেবে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করে। জিদান, অঁরি, প্যাট্রিক ভিয়েরা, ফাবিয়েন বার্তেজ ও অধিনায়ক দেশমকে নিয়ে গঠিত দেশটিকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে থাকে ফরাসিরা। মহানায়ক জিদানের একক নৈপুণ্যে প্যারিসের ফাইনালে ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ ঘরে তুলে ফ্রান্স। ফাইনালে দুই গোল করা জিদান পুরো টুর্নামেন্টই ছিলেন অনবদ্য। জিতেন আসরের গোল্ডেন বল পুরস্কার।

২০০২ বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবে আসরে আসে ফ্রান্স। তবে এবার ‘টক অব দ্য টুর্নামেন্ট’র জন্ম দেয় দেশটি। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই দলের প্রাণভোমরা জিদানবিহীন ফ্রান্স ১-০ গোলে হেরে যায় নবাগত সেনেগালের বিপক্ষে। গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা অসহায় আত্মসমর্পণ করে বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকে। দলের যখন তালমাতাল অবস্থা তখন ২০০৬ বিশ্বকাপে অবসর ভেঙে ফিরে আসেন ফরাসিদের আশার আলো জিজু। নিজের শেষ বিশ্বকাপটা আরেকবার স্মরণীয় করে রাখেন তিনি। একক নৈপুণ্যে আরেকবার দলকে তুলেন ফাইনালে। কিন্তু শিরোপাটা যখন নিঃশ্বাস দূরত্বে তখন একটি বিশ্বকাপ ইতিহাসের আলোচিত একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন তিনি। ইতালি ডিফেন্ডার মার্কো মাতেরাজ্জিকে ঢুঁশ মেরে মাঠ ছাড়েন জিজু। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় ফরাসিদের দ্বিতীয় শিরোপা স্বপ্নও। টাইব্রেকারে তারা হেরে যায় ৫-৩ গোলে।

এ নিয়ে ১৫তম বিশ্বকাপ খেলতে রাশিয়া যাবে ফরাসিরা। ফ্রান্স এবার খেলবে স্বদেশি কোচ দেশমের অধীনে। দেশটির হয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে তার। আসন্ন বিশ্বকাপে এবার একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল নিয়েই যাবেন দেশম। দলটির অধিকাংশ ফুটবলার খেলেন ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোতে। আঁতোয়ান গ্রিজম্যান, কিলিয়ান এমবাপ্পে, অলিভার জিরো, পল পগবা, উসমান ডেম্বেলেদের মতো হাইপ্রোফাইল ফুটবলারদের নিয়ে গঠিত দলটি এবার বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদারও। নিজেদের দিনে এদের যে কেউ গুঁড়িয়ে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে।

বর্তমানে দলটিও আছে দারুণ ছন্দে। টানা তিনটি প্রীতি ম্যাচ জিতে প্রস্তুতিটা ভালোভাবে সেরে নিয়েছে তারা। এর মধ্যে চারবারের বিশ্বসেরা ইতালিকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে। সম্প্রতি প্রকাশিত ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও আগের সাত নাম্বার অবস্থান ধরে রেখেছে দেশমের দলটি। তাছাড়া ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স আপ হয়েছে ফ্রান্স। তবে সফলতার জন্য তাদের দরকার জিদানের মতো একজন প্লে-মেকার।

আসন্ন বিশ্বকাপে ফ্রান্স ‘সি’ গ্রুপে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া, পেরু ও ডেনমার্ককে। ১৬ জুন কাজানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে ব্লুজরা। অধিনায়ক হিসেবে দেশম বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। এবার দেখার বিষয়, কোচ হিসেবে ফরাসিদের দ্বিতীয়বারে মতো বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন কিনা।

তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া ও ফিফাডটকম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist