চট্টগ্রাম ব্যুরো
নিজের জীবন দিয়ে মা বাঁচালেন সন্তানকে
সন্তানকে আগলে রেখেছিলেন মা হাসিনা আকতার (৪০)। হঠাৎ দ্রুতগতিতে একটি ট্রাক সামনে চলে আসে। এ সময় তিনি সন্তানকে ধাক্কা দিয়ে তার প্রাণ রক্ষা করেন। কিন্তু নিজে বাঁচতে পারলেন না। সন্তানকে বাঁচিয়ে নিজে বরণ করলেন মৃত্যুকে। গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় ট্রাক চাপায় নিহত চারজনের একজন হাসিনা আকতার।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বলেন, আহত শিশু মো. ইমরান (৬) মায়ের কারণে বেঁচে গেলেও এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। সে মাথা, হাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছে। ডান হাত ভেঙে গেছে। তাকে হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
একই ঘটনায় আহত চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিদওয়ান বলেন, ‘আমরা বাস থেকে নেমে নিউমার্কেটগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন হাসিনা আকতার।
ছেলেকে আগলে রেখেছিলেন তিনি। ধাক্কা দিয়ে সন্তানকে বাঁচাতে পারলেও তিনি প্রাণ বাঁচাতে পারেননি।’
নিহত হাসিনার আরেক সন্তান সাঈদ হোসেন জানান, ‘গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছদাহা এলাকায় তাদের নানার বাড়িতে গিয়েছিলেন মা, তাদের অসুস্থ নানীকে দেখতে। শুক্রবার সকালে তাদের সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারির বাসায় ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তার মা।’
সীতাকুন্ডের বড় কুমিরা এলাকায় মসজিদের ইমামতি করেন হাসিনা আকতারের স্বামী মো. হোসাইন। বড় মেয়ের বিয়ের পর তিন ছেলে এবং তিন মেয়েকে নিয়ে ভাটিয়ারির বানু বাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন হাসিনা-হোসাইন দম্পত্তি।
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে গিয়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়, পুরো পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়েছে। কেউ কাউকে সান্ত¡না দিতে পারছে না। হাসিনা আক্তারের ১০ বছর বয়সী মেয়ে রুহী আক্তার বিলাপ করছিল।
স্ত্রী হারানোর শোক আর আহত ছেলেকে দেখে বাবা হোসাইন যেন বিলাপ করার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছেন। তার দুচোখ বেয়ে শুধু পানি ঝরছিল।
"