প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
চীনের ‘ভূত গ্রাম’
যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। ঘরবাড়ি, দালান, উঠোন থেকে রাস্তাঘাট সবই ঢেকে গেছে ঘন লতাপাতায়। রাস্তার দুই ধারে মাথা উঁচিয়ে রয়েছে আঙুরলতা। এমন গ্রাম রয়েছে চীনের শেংশান দ্বীপে। গ্রামটি জনমানব শূন্য। এ কারণে ওই গ্রামটিকে বলা হয় ‘ভূত গ্রাম’। গ্রামটি ঘুরে দেখতে গুনতে হবে বাংলাদেশি ৬৫৯ টাকা।
চীনের বিখ্যাত নগর সাংহাইয়ের উপকূল থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে শেংশান দ্বীপের ছোট্ট গ্রাম হাওটাওওয়ান। সাংহাই থেকে নৌপথে গ্রামটিতে যেতে সময় লাগে ঘণ্টা পাঁচেক। পুরোপুরি সবুজে ছাওয়া গ্রামটি দীর্ঘদিনই ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে। বিশ্ব উষ্ণায়ন ও মাত্রাছাড়া দূষণ যখন সবুজ প্রকৃতিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে, এই রকম একটা গ্রামের ছবি দেখে বিস্ময় হতবাক গোটা বিশ্ব। ছোট ছোট মাটির বাড়িগুলোও পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সাজানো। গ্রামটির আয়তন প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার। এক সময় প্রায় ৬০০ পরিবারের মোট তিন হাজার মানুষের বাস ছিল এই গ্রামে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পেশায় জেলে। ১৯৫০ সালে পাহাড় কেটে গ্রামটি তৈরি করা হয়। শহরাঞ্চল থেকে অনেকটাই দূরে প্রান্তিক এই গ্রামটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল একেবারেই অনুন্নত। সেই সঙ্গে খাবার ও পানীয় জলের জন্যও গ্রামবাসীদের অনেক দূরে পাড়ি দিতে হতো। একদিকে রুক্ষ পরিবেশ, অন্যদিকে জীবনধারণের নানা অসুবিধার মুখোমুখি হয়ে একে একে গ্রামবাসীরা তাদের ভিটেমাটি ছাড়তে শুরু করেন। অনেকে শহরে পাড়ি দেন। ১৯৯০ সাল নাগাদ হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার ছাড়া গোটা গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে ধীরে ধীরে ডালপালা বিস্তার করতে শুরু করে গাছগাছালি। সমস্ত বাড়িগুলোর গা বেয়ে উঠতে থাকে আঙুর গাছ। এক সময় দেখা যায় গোটা গ্রামটিই সবুজে আবৃত হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি, দালান, উঠোন কোনো কিছুই বাকি নেই।
২০১৫ সালে প্রথম এই গ্রামের খোঁজ পান চীনের এক তরুণ ফটোগ্রাফার কুইং জিয়ান। তিনিই প্রথম এই গ্রামের বেশ কিছু ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন। সবুজে ছাওয়া এমন গ্রাম দেখে হতবাক হয়ে যায় গোটা বিশ্ব। পরবর্তীকালে গবেষণার কাজে হোক বা নিছক পর্যটনের জন্য, বহু মানুষের পা পড়ে এই গ্রামে। খোঁজ শুরু হয় এক সময় গ্রামে বসবাস করা পরিবারদের। ছবি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় হাওটাওওয়ান। গ্রামটি নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন বছর সাতাশের ওয়াং, তিনি জানিয়েছেন, তিনি ও তার পরিবার যখন গ্রাম ছাড়েন তখন তার বয়স ছিল পাঁচ বছর। কাজের সন্ধানেই গ্রাম ছেড়ে চলে যায় তার পরিবার। এখন তাদের ছোট্ট বাড়িটি আঙুরলতায় ছেয়ে যায়। একই অভিজ্ঞতা ঝু মান্ডিরও। একজন গ্রামবাসী বছর বাষট্টির প্রৌঢ় জানিয়েছেন, গ্রামটিতে এক সময় বহু মানুষের বাস ছিল। এখন কান পাতলে গাছপালার শিরশিরানি শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। বছর বাইশের কলেজছাত্রী হুয়াং ডান বলেছেন, ‘এখানে এসে মনে হচ্ছে শুরু থেকেই জায়গাটা প্রকৃতিরই ছিল। মানুষ চলে গেছে, প্রকৃতি আবার তার ঠাঁই ফিরে পেয়েছে।’ আগে বিনামূল্যে গ্রামে ঘোরার সুযোগ করে দেওয়া হলেও বর্তমানে মাথা পিছু ৬৫৯ টাকা (বাংলাদেশি টাকা) টিকিটের দাম ধার্য করেছেন কর্তৃপক্ষ।
"