প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৪ জুন, ২০১৮

চীনের সমর শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের কল্পনারও বাইরে

চীনের সামরিক শক্তি যে গতিতে বাড়ছে তা অনেক বিশ্লেষকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে। লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-আইআইএসএসের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন নিজস্ব সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্র যেমনটি ভেবেছিল সেই হিসাব রীতিমতো ছাড়িয়ে গেছে চীন। চীন সামরিক সরঞ্জামের আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে বেশি এগিয়েছে নৌ এবং বিমান বাহিনীর শক্তি ও ক্ষিপ্রতায় যা যুক্তরাষ্ট্রের কল্পনারও বাইরে। বিবিসি গতকাল রোববার এ খবর জানায়। আইআইএসএসের ১৯৫৯ সালের বৈশ্বিক বিবেচনায় সামরিক দক্ষতা এবং প্রতিরক্ষা ব্যয়ের বার্ষিক মূল্যায়নকে কেন্দ্র করে এই সামরিক ভারসাম্য বিবেচনা করা হয়েছে। অবশ্য সামরিক ক্ষেত্রে চীনের রূপান্তর এক সময়ে খুব বেশি হয়নি। তবে এখন অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য হারে চীনের সামরিক সমৃদ্ধি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে দেশটিতে সমর শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীই ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিচ্ছে চীন।

গত সপ্তাহের শেষ দিকে ‘দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০১৮’ বা ২০১৮ সালের বার্ষিক সামরিক ভারসাম্য প্রতিবেদন প্রকাশের পর আইআইএসএসের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছেন বিবিসির প্রতিবেদক। প্রতিবেদনটিতে তিনি বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং সংক্ষিপ্তসার থেকে আরো বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করেছেন যে বিশ্বের সামরিক শক্তির উত্থানের গতি প্রকৃতি। অতি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বা আলট্রা লং রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল থেকে শুরু করে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানÑ এসবের উদ্ভাবন চীনের অগ্রগতি এবং অসাধারণ প্রযুক্তিগত ক্ষমতারই প্রকাশ।

গত বছর টাইপ-৫৫ ক্রুজার ছিল তাদের বহরে সংযোজিত সর্বশেষ যুদ্ধ জাহাজÑ যা কিনা ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত যেকোনো নৌবাহিনীর জন্যই ভাবনার বিষয় হতে পারে। এখন চীন কাজ করছে এমন একটি বিমানবাহী রণতরী নিয়ে যা কিনা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যুগ্ম সামরিক সদর দফতর হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অস্ত্রশস্ত্র, বিমান প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে পদাতিক আক্রমণের সব ধরনের ব্যবস্থাই রয়েছে তাতে, ঠিক যেমনটি যুক্তরাষ্ট্রেরও রয়েছে।

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে চীন রাশিয়ার কাছ থেকে উন্নত সামরিক প্রযুক্তি পেয়েছিল। সেটি তাদের সহায়তা করে নৌ আর বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী করতে। এখন বেশি আলোচনায় আছে চীনের ফিফথ জেনারেশন ফাইটার বা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। যাতে কিনা রয়েছে ‘স্টিলথ প্রযুক্তি’, যার ফলে এটির সুপারসনিক বা শব্দের চেয়ে বেশি গতিসম্পন্ন এবং অতি সূক্ষ্ম বিমান প্রযুক্তি দিয়ে নির্মিত। তবে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের বিশেষজ্ঞদের এ নিয়ে কিছু সন্দেহ রয়েছে।

তাদের একজনের মতে, ‘চতুর্থ প্রজন্মের বিমানের প্রযুক্তির আরো কিছু সংমিশ্রণ ঘটাতে হবে এই পঞ্চম প্রজন্মের বিমানে।’

তারপরও এক্ষেত্রে চীনের অগ্রগতি সুস্পষ্ট বলেই মত দেন তিনি। বিশেষ করে এয়ার টু এয়ার বা বিমান থেকে বিমানে আঘাত করে এমন ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে এটি যেকোনো পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে বলেই মনে করেন সেই সামরিক বিশেষজ্ঞ।

শীতল যুদ্ধের শেষে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি এগিয়ে থাকলেও চীন এখন সে অবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে আইআইএসএসের বিশ্লেষণ। বিশেষ করে চীনের দূরপাল্লার এয়ার টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা দেশটির সামরিক শক্তিকে সে অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আইআইএসএসের ‘মিলিটারি ব্যাল্যান্স’ এর রচয়িতা বলছেন যে, ২০২০ সাল পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চীন এই ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন ঘটিয়ে যাচ্ছে। তবে আধুনিকায়নের হিসেবে পিছিয়ে আছে চীনের পদাতিক বাহিনী। চীনা সামরিক বাহিনী ব্যবহৃত অন্তত অর্ধেক সমরাস্ত্রকে আধুনিক হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। তবে সেখানেও থেমে নেই চীন। ২০২০ সাল পর্যন্ত উন্নয়নের একটি লক্ষ্যমাত্রা ধরে তারা ‘যান্ত্রিক’ এবং ‘তথ্যগত’ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। চীন এসব সমরাস্ত্রের উন্নতি করে যাচ্ছে স্পষ্টতই একটি কৌশলকে সামনে রেখেই। সমরবিদ্যার ভাষায় একে বলা যায় ‘অ্যান্টি এক্সেস এরিয়া ডিনায়াল’, এতে চীনের লক্ষ্য মার্কিন বাহিনীকে যতটা সম্ভব তার ভূমি থেকে দূরে রাখা। সেই কৌশলকে মাথায় রেখেই দূরপাল্লার বিমান হামলা ও নৌ বাহিনীর সক্ষমতা বাড়িয়ে যাচ্ছে চীন, যা কিনা মার্কিন রণতরীকে প্রশান্ত মহাসাগরের দূরবর্তী স্থানেই আটকে দিতে পারে। চীন কেবলমাত্র সমরাস্ত্রের উন্নতি ঘটিয়েই প্রবল পরাশক্তি হচ্ছে না। অস্ত্র রফতানির বাজারেও চীনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা তাৎপর্যপূর্ণ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist