জাকারিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ
ভাটি এলাকায় বৃষ্টির কারণে পচে যাচ্ছে ধান
ভিজা ধানের দাম কম * শ্রমিক সংকটে খড় সংগ্রহে বিড়ম্বনা * গো-খাদ্যের সংকটের আশঙ্কা
হবিগঞ্জের ভাটি এলাকায় ধান কাটা শেষ হলেও ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে চাষিদের ওঠান ও ‘খলায়’ পানি জমে থাকায় ধান শুকাতে পারছেন না তারা। এতে ধান শুকানো নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারা। অনেক সময় একটু রোদ দেখলেই কৃষকরা যখন খলার মধ্যে কিংবা প্লাস্টিকের ত্রিপালের মধে ধান শুকাতে দেন, এরপরই বৃষ্টি শুরু হয়। এমতাবস্থায় ধান নিয়ে চরম বিপদে পড়েছেন কৃষকরা। তাদের ধান পচে যাচ্ছে। ভিজা ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন না তারা। এবার শ্রমিক সংকটের কারণে খড় সংগ্রহ ও শুকানোর কাছ করতে পারেননি কৃষকরা। তারা বলেছেন, এ কারণে এবার গবাদি পশুর খাদ্যের সংকট দেখা দিতে পারে।
গত বছর অকাল বন্যায় কৃষকদের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। এবার জেলায় কৃষকরা ১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেন। জমিতে বাম্পার ফলন হলেও ধান কাটতে গিয়ে কৃষকরা শ্রমিক সংকটে পড়েন। এই সংকট নিরসন করে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেন। পরবর্তীতে টানা বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মধ্যে কৃষকরা জমি থেকে ধান কেটে খলা ও বাড়িতে জমা করেন। কিন্তু ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে পানি জমে অনেক কৃষকদের খলাই পানিতে তলিয়ে যায়।
যাদের খলা তলিয়ে যায় তারা ধানগুলো সড়ক ও বাড়িতে নিয়ে তোলেন। বৃষ্টির জন্য ধান শুকাতে না পাড়ার কারণে ধানগুলো পচনের হাত থেকে রক্ষার জন্য অনেক কৃষক বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলে রাখেন। এর মধ্যে মাঝে মাঝে রোদ উঠায় কৃষকরা কিছু ধান শুকাতে পারেন। কিন্তু রমজানের শুরুতেই বৃষ্টি হাওয়ার কারণে কৃষকরা ধান শুকাতে পারছেন না। রমজান মাসে অনেক কৃষক, কৃষাণি রোজা রেখে ধান শুকানোর কাজ করছেন। তারপরও তারা তাদের উৎপাদিত ধান শুকাতে পারছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বানিয়াচঙ্গ উপজেলার সুবিদপুর, আতুকুড়া, সুনারু গ্রামের কৃষকদের ধান বিভিন্ন খলার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু কৃষকরা রোদের জন্য ধান শুকাতে পারছেন না। আতুকুড়া গ্রামের কৃষক মখলিছ মিয়া জানান, তার খলার মধ্যে ৩০০ মণ ধান কাঁচা রয়েছে। কিন্তু রোদ না উঠায় ধানগুলো শুকানোতে পারছেন না। তিনি বলেন, খাবারের জন্য কোনো ধান সিদ্ধ দিতে পারছি না। আরো ১২ একরের জমির ধান কাটার বাকি রয়েছে। একই গ্রামের কৃষক আজম আলী জানান, ১০০ মণ ধান খাবারের জন্য সিদ্ধ দিয়েছিলাম। কিন্তু রোদ না উঠার কারণে সেগুলো শুকাতে পারছি না। কাঁচা ধান বিক্রি করতে গেলেও পানির মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। শুকনা ধান বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না। খলার মধ্যে জমে থাকা অনেক ধান পচে যাচ্ছে।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, ইতোমধ্যে হবিগঞ্জ জেলার ৯৭ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। হবিগঞ্জ সদরসহ উঁচু এলাকার কিছু জমি কাটার বাকি রয়েছে। কিন্তু কাটা জমিগুলো থেকে কৃষকরা ৬০ ভাগ উত্তোলন বা শুকাতে পেরেছেন। বাকি ধানগুলো রোদের জন্য শুকাতে পারছেন না। আমরা আশা করি, রোদ হলে ধানগুলো শুকাতে পারবেন।
অপরদিকে, যে কৃষকদের ধান কাটা শেষ হয়েছে, তারা এখন খড়ের পুঞ্জি গড়ে তুলছেন। কিন্তু ধান রক্ষা করতে গিয়ে কৃষকরা জমি থেকে সেভাবে খড় কেটে আনেননি। যে কারণে আগের তুলনায় অনেক কম খড় পাচ্ছেন কৃষকরা। তারা বলেছেন, এ কারণে এবার গোখাদ্য সংকটে পড়তে পারে।
"