হাসান ইমন

  ২৭ মে, ২০১৮

ডিএনসিসিতে ৮০ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া

৭৯ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার ১৮ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহকর) বকেয়া রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সমবায় সমিতি, হাসপাতাল, গার্মেন্টসসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করতে হিমশিম খাচ্ছে সংস্থাটি। সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা বলছেন, বকেয়া পাওনাদারদের কাছে বার বার নোটিশ ও মামলা করেও টাকা আদায় করা যাচ্ছে না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান মামলা করায় হাইকোর্ট গৃহকর আদায় স্থগিত করে দিয়েছে। তবে কয়েকটি খেলাপি প্রতিষ্ঠান বলেছে, সিটি করপোরেশনগুলোর সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের গাফিলতিতেই এমন ঘটনা ঘটছে। তাগিদ দিলে তারা অবশ্যই বকেয়া পরিশোধ করতেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্র শ্রী বড়–য়া বলেন, বছরের পর বছর যারা হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রাখছেন সিটি করপোরেশন তাদের চাপ দিলেই তারা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। তখন হাইকোর্টের একটি রিটে হোল্ডিং ট্যাক্স স্থগিত করেন। পরে সিটি করপোরেশন ওই রিট পিটিশনের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষ হতে দীর্ঘদিন লেগে যায়। আবার কিছু কিছু সরকারি সংস্থা রয়েছে যারা হোল্ডিং ট্যাক্স শোধ করতে চায় না। এ কারণেই এত টাকা বকেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে প্রায় ৪০০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি অঞ্চলে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে একযোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আশা করি এর একটা প্রভাব পড়বে।

আয় বাড়াতে হোল্ডিং ট্যাক্স সমতায়ন, কর খেলাপিদের তালিকাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্যাক্স পরিশোধ না করায় অনেক বাড়িমালিকের বিরুদ্ধে মামলাসহ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মালামাল ক্রোকের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে তৎপরতা শুধু চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এখানে হোল্ডিং দুই লাখ ২০ হাজার, অঞ্চল পাঁচটি। এসব অঞ্চলে মোট হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া ৫৬ কোটি ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৬৩৬ টাকা। উল্লেখযোগ্য খেলাপিদের মধ্যে

রয়েছে, মিরপুরের হযরত শাহ্ আলী মার্কেট বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৪০ টাকা। কল্যাণপুরের মোসলেহ উদ্দিন আহমদ ২ কোটি ১৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক হাসপাতাল ৮৩ লাখ ৫২ হাজার ৯০৭ টাকা, মনিপুর হাইস্কুল ৭৯ লাখ ১২ হাজার ২৪২ টাকা, আবদুল করিমের কাছে ৬৭ লাখ ৮১ হাজার ৭২৫ টাকা, কাফরুলে ওয়াজ উদ্দিনের কাছে ৩২ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৭ টাকা, ক্যাপিটাল টাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল হোসেন ২৪ লাখ ১৩ হাজার ৫৪০ টাকা, মিজানুরের কাছে ১৯ লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৮ টাকা, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ২৮৯ টাকাসহ ডিএনসিরি অঞ্চল-৪ হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৪ হাজার ৬৬৫ টাকা।

এছাড়া সংস্থাটির অঞ্চল-২ বকেয়া রয়েছে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮০ টাকা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খেলাপির মধ্যে রয়েছে মেসার্স কুসুম-এ-বাগদাদ কলওয়ালপাড়া বহুমুখী সমবায় সমিতির কাছে ৫৯ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৭ টাকা, মুসলিম বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে ২৯ লাখ ২ হাজার ১৯৭ টাকা, মেসার্স ফারুক কম্পিউটার এসেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২৮ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৮ টাকা, মেসার্স লিভার গার্মেন্টস ২০ লাখ ১১ হাজার ৮৪৪ টাকা, এম এ মোতালেবের কাছে ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ০৮৭ টাকা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের কাছে ১৬ লাখ ১ হাজার ৬০৯ টাকা পাবে সংস্থাটি।

গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে পাওনা ২৩ কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ৩৮২ টাকা, ইঞ্জিনিয়ার এস এম এইচ আই ফারুকের কাছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৬ হাজার ৫২৯ টাকা, বাণীচিত্র চলচ্চিত্রের কাছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৪ হাজার ৪ টাকা, বনানীর ৬০ নম্বর প্লট শাহাবুদ্দিনের কাছে ৯২ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৩ টাকা, তারিক উল্লাহ কাছে ৯০ লাখ ২০ হাজার ১৮৯ টাকা, গুলশানে ডা. ইসহাক ইমাম মাসুমের কাছে ৫১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৩ টাকা, কাশেম ড্রাইসেল লিমিটেডের কাছে ৩২ লাখ ৬৭ হাজার ২৬৪ টাকা, বনানী রোড ৩১/এ আই ব্লকের ৩১ বাসার মালিক মজিবুর রহমানের কাছে ৬৭ লাখ ৮ হাজার ৩৮১ টাকা, মেসার্স বাংলাদেশ এক্সপোর্টস লিমিটেডের কাছে ৩৭ লাখ ২২ হাজার ৭৬২ টাকাসহ ৪১ কোটি ৩৬ লাখ ২১ হাজার ৫০৬ টাকা পাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

এ বিষয়ে হযরত শাহ্ আলী মার্কেট বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সময়ে হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। এটি নিয়ে আপিল চলছে। এর মধ্যে ৫ মে ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। ধাপে ধাপে পরের বকেয়া পরিশোধ করব। একই কথা বলেন কল্যাণপুরের শহীদ মিনার রোডের ২৪/ক হোল্ডিং মালিকপক্ষ। তবে মনিপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষককে ফোন করে পাওয়া যায়নি।

রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, অঞ্চল-৫ কারওয়ান বাজার এলাকায় ১৭ কোটি ৬৬ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৭ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির কাছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৪ হাজার ২৫৭ টাকা, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের কাছে ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৬ টাকা, সাকো ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে আবুল হোসেনের কাছে ৯০ লাখ ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা, আম্বর শাহ আলী মসজিদের কাছে ৭৪ লাখ ১৭ হাজার ৫৯০ টাকা, মেসার্স হার্ডি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের পক্ষে আজিজুর রহমানের কাছে ৫৫ লাখ ৮৩ হাজার ২৬৮ টাকা, বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে ৪৫ লাখ ৬২ হাজার ৬২৪ টাকা, হোটেল ইন্দ্রপুরীর মালিকের কাছে ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৭২ টাকা পাওনা উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া অঞ্চল-১-এর আওতাধীন উত্তরা এলাকায় রাজউক কর্মচারী বহুমুখী কল্যাণ সমিতির ২টি হোল্ডিংয়ের কাছে ১ কোটি ১৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪১২ টাকা, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৯০ টাকা, সাঈদুর রহমানের কাছে ৫০ লাখ ৭৬ হাজার ৮০২ টাকা, উত্তরা আধুনিক হসপিটালের কাছে ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার ২৩২ টাকা ও এ্যাবিকো লিমিটেডের কাছে ৩১ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৭ টাকাসহ ৪ কোটি ৫১ লাখ ৪০ হাজার ৪৩৫ টাকা বকেয়া পাবে সংস্থাটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist