প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৬ মে, ২০১৮

পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ

কী আছে শান্তিনিকেতনের ‘বাংলাদেশ ভবনে’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল শুক্রবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ভবনটির উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এই ‘বাংলাদেশ ভবন’ এখন দুই দেশের বন্ধুত্বের আরেকটি নিদর্শন। এই ভবনে বাংলাদেশের ইতিহাস, নানা নিদর্শন, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। কলকাতার আনন্দবাজার ও আজকাল পত্রিকা গতকাল শুক্রবার এ কথা জানায়।

অত্যাধুনিক দোতলা এই ভবনটিতে আছে একটি মিলনায়তন, জাদুঘর এবং গ্রন্থাগার। প্রায় ৪৬ হাজার বর্গফুট জায়গার এই ভবনে উদ্বোধনের আগের রাত পর্যন্তও কাজে ব্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে সেখানে যাওয়া শিল্পী আর কর্মীরা। জাদুঘরটি চালু হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার বর্গফুট এলাকা নিয়ে। পরে এটিকে আরো বড় করার পরিকল্পনাও রয়েছে। আর গ্রন্থাগারের জন্য বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বই। এর মধ্যে অনেক বইই রবীন্দ্রচর্চা এবং রবীন্দ্র গবেষণাভিত্তিক, যা ভারতে সহজলভ্য নয়। গ্রন্থাগার আর জাদুঘরটিতে রয়েছে অনেক ইন্টারঅ্যাকটিভ, টাচ স্ক্রিন কিয়স্ক। রয়েছে রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা শোনার জন্য অডিও কিয়স্ক। ছাপানো বই ছাড়াও ডিজিটাল বইও পড়তে পারবেন পাঠকরা। জাদুঘরেই দেখা হয়েছিল ভবনটির কিউরেটর তারিক সুজাতের সঙ্গে। তিনিই জানালেন, জাদুঘরটিকে মূলত ৪টি জোনে ভাগ করা হয়েছে।

শুরু হয়েছে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত ২৫০০ হাজার বছর পুরনো সভ্যতার নিদর্শন দিয়ে। শেষ হয়েছে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে। মাঝের অনেকটা সময়জুড়ে এসেছে রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গ। প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন রয়েছে, তেমনই আছে অতি দুর্লভ কিছু ছবি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত নানা প্রতœ নিদর্শনের অনুকৃতি। প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত প্রতœ নিদর্শন যেমন আছে, তেমনই আছে ষষ্ঠ-সপ্তম শতকের পোড়ামাটির কাজ, ১৬০০ শতকের নকশাখচিত ইট প্রভৃতি। রয়েছে পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়ের নানা নিদর্শন, দেবদেবীদের মূর্তি। কোনোটা পোড়ামাটির, কোনোটি ধাতব।

মাঝখানে সুলতানি এবং ব্রিটিশ শাসনামলও এসেছে জাদুঘরটিতে রাখা নানা প্যানেলে। রয়েছে ঢাকার জাতীয় জাদুঘর থেকে আনা বেশ কিছু মুদ্রা। এই পর্যায়টি শেষ হয়েছে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়ে। তারপরের বিভাগ শুরু হয়েছে ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক যে বিভাগ, তার আগে ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গটি এ কারণে রাখা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সূচনা তো সেই ১৯৫২-তেই।

নানা প্যানেলে আর ছবিতে ধরা রয়েছে ১৯৫২-র ২১ শে ফেব্রুয়ারি সকালে পাকিস্তানি সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে ঐতিহাসিক মিছিল হয়েছিল, সেখানে গুলি চালনা আর ভাষা শহীদদের প্রসঙ্গ। কিউরেটর তারিক সুজাত বলেন, ‘ঠিক তার পরের বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারির যে সংকলন বেরিয়েছিল, যেখানে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি’, তোফাজ্জেল হোসেনের ‘রক্ত শপথে আমরা আজিকে তোমারে স্মরণ করি’-র মতো কালজয়ী গানগুলো ছিল। রয়েছে সেই সংকলনটির ছবি। তারপরে ১৯৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৬-র আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাÑ এসব পেরিয়ে ১৯৭০-এর নির্বাচন প্রসঙ্গ রাখা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রয়েছে একটি আলাদা গ্যালারি। তাতে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা দুর্লভ ছবি, শরণার্থী শিবিরে ছবি টাঙানো রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে রয়েছে সম্পূর্ণ পৃথক একটি বিভাগ। পূর্ববঙ্গে সাজাদপুর, শিলাইদহ, পতিসরের কাছারীবাড়ির ছবি, সেখানে কবির ব্যবহৃত নানা জিনিসের অনুকৃতি দিয়ে সাজানো রয়েছে জাদুঘরের এই অংশটি।

কয়েকটি ব্যবহৃত বস্তুও আনা হয়েছে শাহজাদপুর থেকে কেরোসিনের বাতি, লবণ দানি, খাবার পাত্র। এগুলো অবশ্য উদ্বোধনের পরেই ফেরত চলে যাবে বাংলাদেশে। কিউরেটর বলেন, ‘যেসব প্রতœ নিদর্শন নিয়ে আসা হয়েছে, সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হিসেবে বিশ্বভারতীতে এসেছে। বেশ অনেক বছর থাকবে। চিরস্থায়ীভাবে দেওয়া হয়নি। সরকারের সঙ্গে বিশ্বভারতীর মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী নিদর্শনগুলো এসেছে। ঠিক যেভাবে নানা জাদুঘরে প্রদর্শন বিনিময় হয় সারা পৃথিবীতেই।

বাংলাদেশ ভবনের জমির পরিমাণ ৮ বিঘা সমপরিমাণ, বা প্রায় ২.৭৫ একর। ভবনে রয়েছে ৪৫৩ আসনবিশিষ্ট একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম, দুটি সেমিনার হল, গ্রন্থাগার, জাদুঘর, ক্যাফেটেরিয়া ও আর্কাইভ স্টুডিও। অডিটোরিয়ামটিতে আলো এবং শব্দের যথাযথ প্রক্ষেপণের দারুণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অডিটোরিয়ামের ছাদ তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশের নৌকার ছৈ-এর আদলে। ভবনের নিচ তলায় দুটি সেমিনার হল রয়েছে, যার প্রত্যেকটি ১৬০ আসনবিশিষ্ট। প্রয়োজনে সেমিনার হল দুটির অন্তর্বর্তী স্লাইডিং ফোল্ডিং পার্টিশন সরিয়ে একটি মাল্টিপারপাস হল হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।

ভবনের নিচতলায় দক্ষিণ পাশে আছে জাদুঘর। এখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-সম্পর্কিত বিষয়াদি প্রদর্শনীর জন্য স্থান পেয়েছে। নিচতলায় প্রবেশের পরে ভবনের ভেতরে একটি উঠান আছে। উঠানে প্রাকৃতিক আলো আসার ব্যবস্থা রয়েছে এবং বর্ষাকালে ওই উঠানে বসে বর্ষার শব্দ ও আমেজ উপভোগ করা যাবে। বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রচারের জন্য এই উঠানে কোনো মেলার আয়োজন হতে পারে বা একটি মিলনমেলার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

লাইব্রেরিটি ভবনের দোতলায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে। এ ছাড়াও একটি স্টুডিও ও একটি ফ্যাকাল্টি কক্ষের সংস্থান রয়েছে দোতলায়। দোতলার বামপার্শ্বে প্রায় ১০০০ বর্গফুটের একটি ক্যাফে আছে। ক্যাফের বাইরে খোলা ছাদে বসার ব্যবস্থা রয়েছে। পুরো ভবনটি প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশগম্য হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনে ব্যবহৃত উপকরণগুলোতে মাটি পোড়ানো ইট ব্যবহার না করে স্যান্ড সিমেন্ট দ্বারা তৈরি ইট ব্যবহার করা হয়েছে এবং চৌচালা ছাদে ইটের টালির পরিবর্তে পিভিসি লাল টালি ব্যবহার করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist