হাসান ইমন

  ২৫ মে, ২০১৮

ফুটপাতে শ্রমজীবীদের ইফতার

সূর্য তখনো ডোবেনি, মাগরিবের আজান হতে বাকি অল্প সময়। ইফতার করতে ব্যস্ত হয়ে বাড়ি ফেরে নগরবাসী। ঠিক তখন থেকেই ইফতারের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফুটপাত অথবা খোলা জায়গায় বসে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ। সারা দিন কাজ করে অল্প আয়োজনের এ ইফতারে তাদের তৃপ্তি ও শুকরিয়া আদায়ে কোনো কমতি নেই। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধু নিয়ে, কেউবা তার কাজের সঙ্গী নিয়ে বসে যান ইফতারে।

প্রতিদিন ইফতারের আগমুহূর্তে রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। থেমে থেমে চলে যানবাহন। চারদিকে তখন তৈরি হয় পিনপতন নীরবতা। প্রাইভেট কারগুলোকে আর রাস্তায় দেখা যায় না। কারণ ইফতারের আগেই তারা বাসায় পৌঁছে যায়। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর পাশাপাশি কাজের সন্ধানে বাইরে থাকা বাসের ড্রাইভার, হেলপার, রিকশাওয়ালা ও সিএনজিচালকদের পথের মাঝেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে ইফতারি সারতে দেখা যায়। রাজধানীর শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, মহাখালী ও তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।

তেজগাঁওয়ের নাবিস্কো এলাকায় রিকশা চালান ৫০ বছর বয়সী সাদিকুল ইসলাম। দেশের বাড়ি নীলফামারী। ২০ বছর ধরে রিকশা চালান এই নগরীতে। বছরের ১১ মাস সবার মতো এক রকম চললেও রোজার মাসটি একটু ব্যতিক্রম তার। কারণ রোজায় অন্য মানুষরা বাসায় গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করে। কিন্তু তাকে করতে হয় রাস্তায়। কখনো একা, আবার কখনোবা কয়েকজন চালকের সঙ্গে মিশে। তার পরও তিনি খুশি।

রাস্তার পাশে ইফতার করতে কেমন লাগেÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন রোজার দিন। দিন শেষ হলে কয়েকজন মিলে একসঙ্গে ইফতার করি। সবার সঙ্গে ইফতার করে অনেক আনন্দ পাই। সামান্য ছোলা, মুড়ি, পিয়াজু, বেগুনি কিনে ইফতার করিÑ এটাই আমার বড় তৃপ্তি।’

শাহবাগ মোড়ে দেখা যায়, পরিবার নিয়ে ইফতার করছেন ফুল ব্যবসায়ী ফিরোজা খাতুন। স্বামী নেই। চার ছেলেমেয়ে নিয়ে তার সংসার চলে রাস্তায় ফুল বিক্রি করে। এর মধ্যে বড় এক ছেলে এক মেয়ে চরে থাকেন। আর দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে শাহবাগেই থাকেন তিনি। দিন পর সবাইকে নিয়ে ইফতার করতে কেমন লাগছেÑ জানতে চাইলে বলেন, ‘এখানে ইফতার করতে ভালোই লাগে। মেয়াডা রোজা রয় আর ছেলেডার বয়স ছোড হওয়ায় রোজা রাখতে পারে না। ইফতারে যা জোগাড় করতে পারি তা দিয়ে খুশিতে ইফতার করি।’

চাঁদপুর থেকে ঢাকায় কাজ করতে এসেছেন শওকত। ফেরিওয়ালার কাজ করে পরিচিত বন্ধুকে নিয়ে ইফতার করছেন ফুটপাতে বসেই। আক্ষেপ করে জানালেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ইফতারি করা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। সামান্য ছোলা, মুড়ি, পিয়াজু আর বেগুনি কিনতে অনেক পয়সা চলে যায়।

ফার্মগেটে বাস থামিয়ে ইফতার করছিলেন মিরপুরগামী বাসের হেলপার রিয়াদ। তিনি বলেন, শ্রমিকদের জীবন এভাবেই চলে। তাই রাস্তায় বসেই ইফতারি সারতে হচ্ছে। তবে ইফতারি আইটেমের দাম বেশি হওয়ায় ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, সব জিনিসের দাম ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। যার কারণে ইফতারি আইটেমও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বেশি দামের ইফতারি কেনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই রোজা রাখেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইফতারি করেন। তিনি জানান, সন্ধ্যায় একসঙ্গে ইফতারির মজাটাই আলাদা। রাস্তার পাশে বসে বন্ধু নিয়ে ইফতার করেছেন সুমন। পরিবারের সঙ্গে ইফতারের সময় পাই না। দুই বন্ধু মজা করে ইফতার করছেন।

এদিকে রোজায় ধনী-গরিবের ব্যবধান ও ভেদাভেদ কমিয়ে দিলেও ইফতার আয়োজনে এ ব্যবধান এখনো প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে গরিব ও দরিদ্র মানুষের এখনো নির্ভর করতে হয় ফুটপাতে তৈরি ইফতারসামগ্রীর ওপর। ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য না থাকায় নামিদামি হোটেলে তারা ইফতার করতে পারেন না। তাই নির্ভর করতে হচ্ছে ফুটপাতে তৈরি এসব ইফতারির ওপর। মধ্যবিত্তদের প্রতিদিনের এসব ইফতার আইটেমের মধ্যে রয়েছে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পিয়াজু, খেজুর, আলুর চপ ও জুসসহ সাদামাটা ইফতারির ওপর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist