খুলনা প্রতিনিধি

  ২৪ মে, ২০১৮

অচিরেই সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অচিরেই সুন্দরবনকে বনদস্যু-জলদস্যু মুক্ত ঘোষণা করা হবে। আমরা যেভাবে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের দমন করেছি, সেভাবেই সুন্দরবন থেকে বনদস্যু-জলদস্যুদেরও দমন করা হবে। যারা এদের সহযোগিতা করেছে তাদেরও আইনের মুখোমুখি করা হবে।

তিনি গতকাল বুধবার দুপুরে খুলনাস্থ র‌্যাব-৬-এর কার্যালয়ে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ এবং সাবেক জলদস্যুদের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অপার সম্ভাবনাময় সুন্দরবন। সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিতে বনদস্যু-জলদস্যুরা অবস্থান নিয়েছিল। র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ছয়টি বনদস্যু বাহিনী ভুল বুঝতে পেরে আজ আত্মসমর্পণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের সব সময় বলেনÑ আমরা যদি তাৎক্ষণিক তাদের শাস্তি দেই তাহলে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে না। আমরা তাদের সংশোধন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। তারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে।

এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে।’ এ জন্য তিনি প্রত্যেকের জন্য এক লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আজকে শ শ জলদস্যু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে।

দেশে উন্নত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে চার লাখ বিদেশি চাকরি করছেন। এ কথাই প্রমাণ করে যে, আমাদের দেশ উন্নয়নের পথে ধাবিত হচ্ছে। সে কারণেই বিদেশিরা এদেশে আসছে।

তিনি পুলিশের কর্মকান্ডের প্রসঙ্গে বলেন, আজকের পুলিশ আর ১০ বছর আগের পুলিশ এক নয়। আজকের পুলিশ নিজের জীবন বিপন্ন করেও কাজ করছে। তারা জঙ্গি দমনে জীবন দিয়েছে। তারা দস্যু দমনে নিজের জীবন বিপন্ন করে জঙ্গলেও কাজ করছে।

ক্রসফায়ার সম্পর্কে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পুলিশ কাউকেই ক্রসফায়ার দেয় না। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আগে কখনোই গুলি করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি না হয়। জীবন রক্ষার্থেই তারা গুলি চালায়। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও আহত হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা ২০২১-২০৪১ সালের উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে আমরা সেই স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হতে দেব না। আমরা আর কোনো ‘ঐশী’ তৈরি হতে দেব না। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ এবং সাবেক জলদস্যুদের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন র‌্যাব-৬-এর পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খুলনা সিটি করপোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, নৌপুলিশের ডিআইজি শেখ মো. মারুফ হাসান, র‌্যাব-৮-এর অধিনায়ক আতিকা ইসলাম, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান এবং খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্য, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ছয় বনদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণ

গতকাল বুধবার সুন্দরবনের ছয়টি বনদস্যু বাহিনীর ৫৭জন সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫৮টি অস্ত্র এবং এক হাজার ২৮৪ রাউন্ড গুলি হস্তান্তর করে আত্মসমর্পণ করে। এই বাহিনীগুলো হচ্ছে দাদাভাই বাহিনী, হান্নান বাহিনী, আমির আলী বাহিনী, সূর্য বাহিনী, ছোট শামসু বাহিনী ও মুন্না বাহিনী। এর মধ্যে দাদাভাই বাহিনীর প্রধান মো. জয়নাল আবেদীন ওরফে রাজন ওরফে দাদাভাই (৩৮) সর্ব প্রথম তার বাহিনীর ১৫জন সদস্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। পরে একে একে বাকি পাঁচটি বাহিনীর সদস্যরাও আত্মসমর্পণ করে।

পুলিশের হয়রানি ও মামলা প্রত্যাহার চান আত্মসমর্পণকৃত দস্যুরা

আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যুরা পুলিশের হয়রানি ও তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট। আত্মসমর্পণের পর দাদাভাই বাহিনীর প্রধান মো. জয়নাল আবেদীন ওরফে রাজন ওরফে দাদাভাই বলেন, আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে চাই। কিন্তু আমাদের মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় পুলিশ আমাদের হয়রানি করে থাকে। এতে আমাদের মতো আমাদের পরিবারের সদস্যরাও সব সময় আতঙ্কিত থাকে।

ইতিপূর্বে আত্মসমর্পণকৃত মজিদ বাহিনীর প্রধান তাকবির ওরফে মজিদ বলেন, আমরা র‌্যাবের কাছে অস্ত্র দিয়ে আত্মসমর্পণ করলেও মামলা থাকায় পুলিশ আমাদের হয়রানি করছে। এই মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে বেঁচে থাকা খুব কঠিন। আর কোনো অপরাধ জগতে ফিরে যেতে চাই না। আমরা এই মুক্ত জীবনে থাকতে চাই। কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো থাকতে চাই। তিনি মামলা প্রত্যাহার করে পুলিশি হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে স্বরাষ্ট্র ও র‌্যাবের প্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

উল্লেখ্য, বিগত ২৩ মাসে সুন্দরবনের ২০টি বাহিনীর ২১৭জন জলদস্যু ৩৬৪টি অস্ত্র ও ১৭ হাজার ৮৬৯ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। এ সময় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৩৪জন বনদস্যু নিহত হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist