পাঠান সোহাগ

  ২৩ মে, ২০১৮

রোজাদারদের মুখে মুখে ফখরুদ্দিনের ইফতার

১৯৫২ সালের কথা। ফখরুদ্দিন ভিকারুননিসা স্কুলে প্রহরীর চাকরি নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। চাকরির সুবাদে বেইলি রোডে বসবাস। অল্পদিনের মধ্যেই স্কুলের ক্যান্টিনের দায়িত্ব পেলেন তিনি। এভাবেই চলছিল দিন। তারপর ১৯৬৬তে সংসারের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়তি রোজগারের চিন্তা মাথায় আসে। পরে পরিবারের অন্য সদস্যদের সম্মতিক্রমে রমজান মাসে ইফতার বিক্রির কাজ শুরু করলেন একই বছরে। স্কুলের সামনে একটি কাঠের টেবিলে মুড়ি, ছোলা, পিয়াজু ও বেগুনি দিয়েই ইফতারির বিক্রি শুরু করেন তিনি। অভাবের সংসারে বাড়তি জোগান দেওয়ার চেষ্টা থেকেই তিলে তিলে গড়ে তোলেন ফখরুদ্দিনের ইফতার বাজার। সেই ফখরুদ্দিনের ইফতারসামগ্রী ও বিরিয়ানির সুনাম এখন রাজধানীর আনাচে-কানাচে। রোজাদারদের কথায় কথায় উচ্চারিত হয় এই ইফতারির স্বাদ-গন্ধের প্রশংসা।

এ যাত্রা একাত্তরের পরে বড় পরিসরে শুরু হয়। সঙ্গে বিরিয়ানির ব্যবসাও যুক্ত করেন। ইফতারি দিয়ে শুরু হলেও সুখ্যাতি পায় ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি নামে। রমজান মাসে ইফতারি বিক্রি হতো বেশ সুনামের সঙ্গে। বর্তমানে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় ফখরুদ্দিনের নিজস্ব শো-রুম আছে। ঢাকায় ফখরুদ্দিনের শাখা রয়েছে আটের অধিক। আরো দুটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে ইফতারি বিক্রি করে এই প্রতিষ্ঠানটি। এবার ৪৬ পদ নিয়ে সাজানো হয়েছে ফখরুদ্দিনের ইফতার বাজার। সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি শো-রুম ঘুরে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতি বছরই রাজধানীর বেইলি রোড এলাকায় ইফতারের আয়োজন করে ফখরুদ্দিন ইফতারি। ভিকারুননিসা স্কুলের বাউন্ডারি ঘেঁষে ইফতারের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল পরিসরে সাজিয়েছে তাদের ইফতার বাজার। গেট দিয়ে ঢুকতেই হাতের ডানে একটি টেবিল বসিয়ে বিক্রি হচ্ছে কয়েক ধরনের খেজুর, রুহ আফজা ও অন্য পানীয়। ভেতরে গোল করে টেবিল বসিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবার। আর পেছনেই আছে রান্নার ব্যবস্থা। রান্না হচ্ছে হালিম। ভাজা হচ্ছে কাবাব ও জিলাপি। খাসির হালিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা। মুরগির হালিম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। গরু-খাসির চাপ ও রেজালা ৯০০ টাকা কেজি। এক কেজি শিক-কাবাব এক হাজার ৪০০ টাকা। জালি-কাবাব, মুঠিয়া-কাবাব, টিকিয়া-কাবাব, শামি-কাবাব প্রতিটির দাম ৪০ টাকা। চিকেন ক্রাম ফ্রাই, চিকেন রোস্ট, চিকেন চাপ, চিকেন টিক্কা, চিকেন অ্যারাবিয়ান শর্মার দাম ১২০ টাকা প্রতিটি। আস্ত মুরগির রোস্ট ৪৮০ টাকা। খাসির লেগ রোস্ট ৯০০ টাকা। কিমা চপ, কিমা পুরি, কিমা সমুচা, স্প্রিং রোল, ভেজিটেবল রোল ও পনির সমুচার দাম ২০ টাকা প্রতিটি। পিয়াজু, বেগুনি, বেসন চপ, পাকোড়া ছয় টাকা করে। ছোলা প্রতি কেজি ২০০ টাকা। ফুল বক্স খাসির কাচ্চি পাওয়া যাবে ২০০ টাকায়। আর তেহারির দাম ২৫০ টাকা। বোরহানি ৬৫ টাকা। মোটা জিলাপি কেজি প্রতি ২০০ টাকা, চিকন জিলাপি কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা। বুন্দিয়া ২৫০ টাকা কেজি, রসমালাই ২৫০ টাকা কেজি, মিষ্টি দই ২৫০ টাকা বাটি, ফিরনি প্রতি কাপ ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফখরুদ্দিন ইফতার বাজারে কর্মরত আছে সোহেল। তিনি বলেন, বিক্রি শুরু করি দুপুর ২টা থেকে। বিকাল সাড়ে ৪টায় ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে হালিম, গরু, খাসির চাপ ও কাবাবের আইটেমগুলো। তবে এবার বিক্রি এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি।

ইফতার কিনতে শান্তিনগর থেকে এসেছেন সোরহাব। তিনি বলেন, সাতটি আইটেম কিনেছি। আরো কিছু কিনব। পছন্দের মজাদার আইটেম পাওয়া যায়। দাম একটু বেশি তবু আসি। বেইলি রোডের রোমানা জামান বলেন, বাসা কাছে তো, প্রতিদিনই আসি এক চক্কর করে। কমবেশি কিছু না কিছু কেনা হয়।

বর্তমানে ফখরুদ্দিনের তৃতীয় প্রজন্ম মোহাম্মদ রফিকের ছেলে তারেক হোসেন জানান, এ ব্যবসা বাব-দাদার এতিহ্য। আমরা তাদের অনুসরণ করেই আসছি। ঢাকায় আমাদের একটা ব্যান্ড তৈরি করতে চাই। অবশ্যই পারব। সেটা সময়ের ব্যাপার।

ফখরুদ্দিনের ইফতারের ব্যবস্থাপক সোহেল জানান, আমাদের এখানে প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিনই তৈরি করা হয়। ভেজাল খাবার জেনেশুনে বিক্রি হয় না। খবারে মানের দিক দিয়ে আমরা সচেতন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist