পাঠান সোহাগ
ইফতারির ঐতিহ্য শাহি জিলাপি
ইফতারের সঙ্গে শাহি জিলাপি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। এটি ছাড়া যেন ইফতার অপূর্ণই থেকে যায়। মুখরোচক খাবারের তালিকায় এটি প্রথম দিকে থাকে। শুধু পুরান ঢাকাই নয়; ঢাকার সব অভিজাত এলাকায় এ জিলাপির কদর আছে। শাহি জিলাপি বেইলি রোড, গুলশান, ধানমন্ডিসহ সব এলাকায় পাওয়া যায়।
শাহি জিলাপি আকারে বড়, দেখতেও আকর্ষণীয়। সচরাচর তিন থেকে পাঁচ প্যাঁচে, কখনো ছয় প্যাঁচে জিলাপি করা হয়। কিন্তু ২০ প্যাঁচের শাহি জিলাপির কথা শুনে তো অনেকের জিবে পানি চলে আসে, এটাই সত্য। পুরান ঢাকার কারিগরদের হাতে তৈরি এ জিলাপি আসলেই দেখার বিস্ময়কর ব্যাপার। শুধু দেখাই নয়, খেতেও বেশ সুস্বাদু। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রথম রমজান থেকেই চকবাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে বানানো হচ্ছে শাহি জিলাপি। এটি কারিগরদের নিপুণ হাতের প্যাঁচেই তৈরি হচ্ছে। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমন সুস্বাদু। কথা হয় পুরান ঢাকার চকবাজারে জিলাপি কারিগর আবদুস সামাদ ও আবদুল জব্বারের সঙ্গে। তারা দুজন একই সঙ্গে কাজ করেন। তারা বলেন, বাজারে তিন ধরনের জিলাপি আছে। বোম্বে জিলাপি, শাহি জিলাপি ও রেশমি জিলাপি। সবচেয়ে ছোট জিলাপি হয় আড়াই প্যাঁচের। বোম্বে জিলাপি আকারে ছোট হয়। তবে অনেক রসালো। আর রেশমি জিলাপি চিকন ও অনেক টেস্ট হয়। আর বড় জিলাপি ২০ প্যাঁচের, একে বলা হয় শাহি জিলাপি। এই জিলাপির প্রতিটির ওজন এক কেজি থেকে চার কেজি পর্যন্ত হয়। পলাশির সাকিব চকবাজার থেকে শাহি জিলাপি কিনছেন। তিনি বলেন, ‘এ জিলাপি বাবার পছন্দ। তাই প্রতি রমজানেই কিনতে হয়। আমরাও খাই।’ গুলিস্তানের সুজন বলেন, ‘ইফতারিতে মিঠাই জাতীয় কিছুই খেতে তাই শাহি জিলাপি তালিকায় রাখি। সপ্তাহে চার দিন অন্তত এ জিলাপি নেওয়া হয়।’
কারিগর আবদুল জব্বার বলেন, ‘২৮ বছর ধরে জিলাপি বানাচ্ছি। বাপ-দাদার এ পেশায় আছি, থাকব। বাব-দাদার আমলে এই শাহি জিলাপি রাজা-বাদশারা খাইতেন। এ জিলাপি মুঘল আমল থেকে প্রচলিত।’
তিনি বলেন, ‘শাহি জিলাপি পুরোটায় ডাল দিয়ে তৈরি। এটি গুণে-মানে অনন্য। স্বাদেও ছিল অতুলনীয়। সে সময় এক একজন বড় জিলাপি কয়েকটা খাইয়া ফালাইত।’
কারিগর সেলিম মিয়া জানান, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রেশমি জিলাপি (ঘি ও জাফরানে ভাজা) ১৮০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোম্বে জিলাপি জায়গাভেদে ১৮০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়। শাহি জিলাপি আকারেভেদে ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
"