প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
যে কারণে দেশে গড় আয়ু ৭২
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে গড় আয়ু ৭২ বছর। ১৯৬০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মানুষের গড় আয়ু বাড়ার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিটি দশকেই এ হার বেড়েছে। এর মধ্যে কেবল ষাটের দশকের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৯৬৫ সাল নাগাদ যে বৃদ্ধি ঘটেছে, দশক শেষে মানে ১৯৭০-এ এসে তার কিছুটা অবনতি হয়েছে। এরপর পরবর্তী প্রায় সবকটি দশকে, একটি মাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া, পাঁচ বছর করে বেড়েছে এখানকার মানুষের গড় আয়ু। এর মধ্যে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে গড় আয়ু বেড়েছে সাত বছর। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুন্নবীর মতে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগের মহামারী প্রতিরোধে টিকার সহজলভ্যতা এবং আমিষ ও পুষ্টির অভাব অনেকাংশেই পূরণ হওয়ার কারণে মানুষের অকাল মৃত্যু কমেছে। বেড়েছে গড় আয়ু। ২০১০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত গড় আয়ু বৃদ্ধি কিছুটা স্থবির হয়ে আছে। এ সময়ে গড় আয়ু মাত্র দুই শতাংশ বেড়েছে বলে জানাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। মাত্র ছয় দশকে গড় আয়ু ৪৬ বছর থেকে ৭২ বছরে উঠে আসার পেছনে কোন ব্যাপারগুলো কাজ করেছে? ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রতি পাঁচ বছর ব্যবধানের হিসাবে দেখা যায়, ১৯৬০ থেকে ১৯৬৫ সালে গড় আয়ু ৪৬ থেকে ৪৯ বছর হয়েছে। কিন্তু তার পরের পাঁচ বছরেই তা আবার খানিকটা কমে ৪৮ বছরে নেমে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক নুরুন্নবী বিবিসিকে বলেন, এই দশকে গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং কিছুটা কমার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রাণঘাতী মহামারী দেখা দিত যেসব অসুখে, চল্লিশের দশক থেকে পশ্চিমের দেশগুলোতে তার প্রতিষেধক আবিষ্কার ও ক্রমে ব্যবহার হতে শুরু করে। কিন্তু এ অঞ্চলে পৌঁছতে সেটার যে সময় লাগে, তাতে পার হয়ে যায় আরও প্রায় দুই দশক। সেজন্য ষাটের দশকের প্রথমার্ধ থেকে গড় আয়ু ক্রমে বাড়তে শুরু করে। কিন্তু ১৯৭০ সালে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও তার ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। এ পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এবং এটি সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি। এরপরে ১৯৭০-এ গড় আয়ুর হার নেমে যায়। পরে আবার ক্রমশ বেড়েছে। এখন যা ৭২ বছর।
"