আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ট্রাম্পের দূতাবাস উদ্বোধনে বিশ্বজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া
জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধনের পদক্ষেপে বিশ্বজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে বিভিন্ন দেশ। গাজায় প্রাণহানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ, ইসরায়েলকে সংযত থাকার আহ্বান ফ্রান্সের : জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরকে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেছে ফ্রান্স। একই সঙ্গে ইসরায়েলকে গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে সংযত থাকর আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘নতুন করে ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা প্রশমনে ফ্রান্স সব পক্ষকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে ফ্রান্স আবারও ইসরায়েল কর্তৃপক্ষকে বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার এবং শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্র ভুল সময়ে ভুল কার্ড খেলেছে : যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যও যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে মত দিয়েছে। ‘যুক্তরাষ্ট্র ভুল সময়ে ভুল কার্ড খেলেছে’ বলে সোমবার মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে বিপুল প্রাণহানির ঘটনা খুবই দুঃখজনক বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ গাজায় চলমান বিক্ষোভে উসকানি দিচ্ছে, সেটি আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু অন্যভাবে চিন্তা করলে বিক্ষোভ থামাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেখানে আরো ধৈর্য ধরা উচিত ছিল।’
সোমবার জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন করা হয়। এর প্রতিবাদে এদিন ভোর থেকেই গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বিক্ষোভ তীব্র হয়। ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে এদিন অন্তত ৪৩ ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে কিশোর ও পঙ্গুও রয়েছে।
গাজায় প্রাণহানি নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
ভিয়েনায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘গাজা থেকে এত মানুষ হত্যার যে খবর আসছে তাতে আমি খুবই উদ্বিগ্ন।’ জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইনও ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে সেখানে চলমান হত্যাযজ্ঞকে ‘মর্মান্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করা উচিত।
পিএলওর ধর্মঘটের ডাক
জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বিক্ষোভে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে সোমবার ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করতে সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। পুরো ফিলিস্তিনি ভূখন্ডজুড়ে এ ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন পিএলওর নির্বাহী কমিটির সদস্য ওয়াসেল আবু ইউসেফ।
যুক্তরাষ্ট্র নিন্দনীয় ‘অপরাধ’ করেছে : হামাস
ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের দল হামাসের এক ঊর্ধ্বতন নেতা খলিল আল হায়া জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলাকে নিন্দনীয় অপরাধ আখ্যা দিয়েছেন। গত সোমবার গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে ফিলিস্তিনিরা সময় বুঝেই বিক্ষোভ করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। খলিল বলেন, ‘আমাদের লোকজনরা আজ (গতকাল) নতুন ইহুদি-আমেরিকান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে এবং রক্ত দিয়ে নিজ অধিকারের ভূমির মানচিত্র এঁকে দিতে বাইরে বেরিয়ে এসেছে।’
দূতাবাস স্থানান্তর পদক্ষেপ উসকানিমূলক : লেবানন
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি সোমবার সকাল থেকেই একের পর এক টুইটে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরকে ‘উসকানিমূলক’ বলে বর্ণনা করে আসছেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়বে। তিনি ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের জন্য তাদের সঙ্গে পরিপূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকান্ডে ইসরায়েল হত্যাযজ্ঞে মেতেছে : তুরস্ক
গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী নিহতের ঘটনার জন্য ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীকে দোষারোপ করেছে তুরস্ক। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলায় যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে ইসরায়েল উৎসাহিত হয়ে এ হত্যাযজ্ঞে মেতেছে; আর এ কারণে গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী হত্যার দায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপরও বর্তায় বলে তুরস্ক মন্তব্য করেছে।
গাজায় ইসরায়েলের শক্তি প্রয়োগের নিন্দায় মিসর
গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে সোমবার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরায়েলের প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নিন্দা করে একটি বিবৃতি দিয়েছে মিসর। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করেছে।’ ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে এমন মারাত্মক সহিংসতার নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কেও মিসর বিবৃতিতে ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়েছে।
এ ছাড়া মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গাজা সীমান্তে ইসরায়েলের সামরিক শক্তি ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরায়েলের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেছে।
এ ছাড়া মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গাজা সীমান্তে ইসরায়েলের সামরিক শক্তি ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরায়েলের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেছে।
"