প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
প্রথম কলাম
এক হ্যারিসনের রক্তে ২৪ লাখ জীবন রক্ষা!
একজনের রক্তেই বেঁচে গেছে ২৪ লাখ মানুষের জীবন! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি! জেমস ক্রিস্টোফার হ্যারিসন, যিনি চিকিৎসক না হয়েও বাঁচিয়েছেন লাখো মানুষের জীবন। হ্যারিসনের জন্ম সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়, ১৯৩৬ সালের ডিসেম্বরে। তার এ জীবনরক্ষার কাজের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় তিনি ‘সোনালী বাহুর মানব’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। গত শুক্রবার শেষবারের মতো রক্ত দিয়েছেন ৮১ বছর বয়সী হ্যারিসন। বয়স যেখানে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
হ্যারিসনের এ মহতী কীর্তির নেপথ্যে অসাধারণ একটি গল্প রয়েছে। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই দুর্ঘটনার কারণে হ্যারিসনকে অস্ত্রোপচারের টেবিলে যেতে হয়েছিল। তাকে বাঁচাতে প্রায় ১৩ লিটার রক্ত দিতে হয়। অন্যের রক্তে জীবন বেঁচেছিল তার। সার্জারির পরে তাকে প্রায় ৩ মাস হাসপাতালে থাকতে হয়। সেই সময়ে তিনি শপথ করেন যে, তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন অন্যকে রক্ত দিয়ে যাবেন। তার সেই শপথ এখনো বাস্তবায়ন করে চলেছেন।
১৮ বছর বয়স থেকে হ্যারিসনের রক্তদান শুরু। কয়েকবার রক্তদানের পর চিকিৎসকরা আশ্চর্যজনকভাবে আবিষ্কার করেন যে, তার রক্তে বিরল এক প্রকার এন্টিবডি আছে, যা ‘রিসাস ডিজিস’ নামে একপ্রকার প্রাণঘাতী রক্তরোগের বিরুদ্ধে মারাত্মক রকম কার্যকর। এ আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আর এ আবিষ্কারের মাধ্যমে নবজাতকদের এ রক্তরোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষেধক তৈরি করা হয়, যা হাজারো নবজাতকের প্রাণ বাঁচিয়েছে।
এরপর থেকে তিনি নিয়মিত প্রতি ২ সপ্তাহ অন্তর রক্তদান করা শুরু করেন। তার রক্ত থেকে যে এন্টিবডি তৈরি করা হয়েছে, তা থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪ লাখ নবজাতকের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। তিনি এক হাজারের বেশিবার রক্তদান করেছেন। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশিবার রক্তদানকারী ব্যক্তি তিনি। মানবসেবায় অবদানের জন্য তাকে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘মেডেল অব দ্য অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়ায়’ ভূষিত করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ান রেডক্রস ব্লাড সার্ভিসের জেমা ফাকেনমায়ারের মতে, হ্যারিসনের রক্ত বেশি মূল্যবান। কারণ তার রক্ত থেকে জীবন বাঁচানো ঔষধ উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। ১৯৬৭ সাল থেকে ৩০ লাখের বেশি গর্ভবতী নারীকে অ্যান্টি-ডি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। সূত্র : সিএনএন
"