গাজীপুর প্রতিনিধি
বিএনপি নেতা নোমানসহ আটক ১৬
হাইকোর্টের আদেশে গাজীপুর সিটির নির্বাচন স্থগিতের খবর ছড়িয়ে পড়লে গাজীপুরে অস্বাভাবিক নীরবতা নেমে আসে। বন্ধ হয়ে যায় সবপ্রকার নির্বাচনী প্রচারণা। খবরের সত্যতা জানতে লোকজন টিভির খবর ও মুঠোফোনের আশ্রয় নেয়। দুপুর আড়াইটার দিকে নির্বাচন স্থগিতের খবর গাজীপুরের মানুষ জানতে পরে। মুহূতেই খবরটি সিটির সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা মুহূতেই বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে, টঙ্গী থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনিত মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। উচ্চ আদালতের আদেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মো. জাহাঙ্গীর আলম এ কথা বলেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার পক্ষে নির্বাচনী জোয়ার দেখে এই রিট করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এ নিয়ে আদালতে লড়াই করে যাবেন। উচ্চ আদালতের আদেশ পাওয়ার পর টঙ্গীর মরকুন এলাকায় হাসান সরকার প্রচার বন্ধ করে নিজ বাড়িতে ফিরে যান। বিকাল সাড়ে চারটার পর জাহাঙ্গীর রওয়ানা হন ঢাকার পথে।
এ বিষেয়ে জাহাঙ্গীর আলম মুঠোফোনে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমি আপিল করব।
এটা ষড়যন্ত্র (রিট) করা হয়েছে। আমার পক্ষে নির্বাচনী জোয়ার দেখে একটি মহল এ ষড়যন্ত্র করেছে। গতকাল রোববার বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের নির্বাচনী প্রচারণায় এসেছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ। নির্বাচন স্থগিতের খবর পেয়ে তারা চলে আসেন জেলা বিএনপি কার্যালয়ে। নির্বাচন স্থগিত নিয়ে সেখানে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করি। আমরা আইনী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এই নির্বাচন যাতে আবার অনুষ্ঠিত হয়, সে জন্য সর্বান্তকরণে আদালতে লড়াই করব। আমাদের আবেগটাকে বেগে পরিণত করে আমদের প্রার্থীকে নিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষে পৌঁছব। ষড়যন্ত্র করে এই নির্বাচন বেশি দিন স্থগিত রাখা যাবে না। আইনী লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হব।
আলাল আরো বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলের চক্রান্ত এটা এবং এটার পেছনে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের ষড়যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু বিজয়ের পতাকা আমাদের হাতেই রয়েছে। এই পতাকাকে নতুন করে উড্ডীন করা হবে। মানুষের রায় ছিনিয়ে নিতে পারবে না, এ কারণে মানুষকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ তারা জাতির সামনে একটা নোংরা দৃষ্টান্ত আজকে স্থাপন করেছেন। আমরা নিন্দা-ধিক্কার ঘৃণা জানাই।’
এদিকে, বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বিকেলে টঙ্গীস্থ তার বাড়িতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হঠাৎ করে হাইকোর্টের ওই রায় গোটা গাজীপুরবাসীকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। গাজীপুরবাসী ভোটাধিকার যাতে স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারে, তার জন্য আইনী লড়াই, মাঠের লড়াই, রাজনীতির লড়াই করে যাব।
এদিকে, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপি প্রার্থীর মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. মাজহারুল আলম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বিএনপি তথা বিশ দলীয় জোটের প্রধান ইস্যু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে আমরা সাড়ে ১১ লাখ সচেতন ভোটারের নিকট গিয়ে ভোট চেয়েছি। জনগণ নজিরবিহীন সমর্থন দিয়েছেন। যার বহিঃপ্রকাশ হতো ১৫ মে। প্রমান হলো গাজীপুরবাসী অবিলম্বে দেশনেত্রীর মুক্তি চায়।
এদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। নির্বাচন স্থগিতের পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসার কিছুক্ষণ পরই টঙ্গী থেকে তাদের আটক করা হয়। নোমনসহ ১৬ আটকের বিষয়টি টঙ্গী থানা ডিউটি অফিসার তানিয়া আক্তার নিশ্চিত করেছেন।
গাজীপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, বিক্ষুদ্ধ কর্মীরা গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ নয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখার লক্ষ্যে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
"