সদরুল আমিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ)

  ০৬ মে, ২০১৮

অপরিকল্পিত বাঁধে জলাবদ্ধতা ডুবে যাচ্ছে হাওরের পাকা ধান

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ও কাঠইর ইউনিয়নের ডাকুয়ার এবং ছন্দোয়ার হাওরে অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে জলাবদ্ধতায় ডুবছে হাওর। স্থানীয় চাষির কথা অগ্রাহ্য করে ওই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে পাকা ধান। সময়মতো ধান না কাটতে পারলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে কষ্টের ফসল। এদিকে, ধান কাটার জন্য কৃষিশ্রমিক সংকটে দিশাহারা চাষি।

মোহনপুর ইউনিয়নের উজান রামনগরে জোয়ালভাঙ্গা হাওর রক্ষার নামে একটি অপরিকল্পিত বাঁধ গ্রামকে বাইরে রেখে করায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বাড়ির সামনের মাঠে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় হাওর থেকে কেটে আনা ধান শুকাতে পারছেন না কৃষক। অন্যদিকে, জলাবদ্ধতার শিকার কোনো কৃষক নিজেদের পাকা ধান রক্ষা করতে রাতের আঁধারে বাঁধ কেটে দিতে পারে এমন শঙ্কায় একই হাওরের পাশের অংশের কৃষক রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। শুধু মোহনপুর ইউনিয়নেই নয় রঙ্গারচর ইউনিয়নেরও একাধিক বাঁধের কারণে লালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

কৃষক ও এলাকাবাসী জানান, সদর উপজেলার মোহনপুর ও কাঠইর ইউনিয়নের ডাকুয়ার হাওরে এ বছর হাওর রক্ষা বাঁধে প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুই ইউপি চেয়ারম্যান সদর উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহানকে ম্যানেজ করে একাধিক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে নিজেদের পছন্দের লোকদের পিআইসিতে যুক্ত করেন। বাঁধের কাজে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ওই সময় এলাকাবাসী মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছিল। জানা গেছে, এই হাওরে বড় অঙ্কের বরাদ্দ দেওয়া হলেও মোহনপুর-কান্দাগাঁও সড়কে পানি নিষ্কাশনের খাঁড়া (ছোট নালা) থাকলেও সেখানেও ভরাট করা হয়। এ সময় স্থানীয় কৃষক পাকা গোলাকার কয়েকটি রিং সড়কে দেওয়ার প্রস্তাব করলে পিআইসির লোকজন কৃষকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এখন বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন দিক থেকে হাওরে পানি ঢুকছে। বিশেষ করে কান্দাগাঁও অংশ দিয়ে ছন্দোয়ার হাওরে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শনিবার বুক সমান পানিতে নেমে কৃষক ধান কেটেছেন। পানি ক্রমাগত বাড়ছে বলে কৃষক জানিয়েছেন। এদিকে ছন্দোয়ার হাওরের পানির চাপ কমাতে ডাকুয়ার হাওরের মূল অংশের মোহনপুর কান্দাগাঁও বাঁধ কেটে দিয়ে উত্তর পূর্বাংশের কৃষক পানি নিষ্কাশন করতে পারেন এই আশঙ্কায় এই বাঁধে গত রাত থেকে পাহারা দিচ্ছেন কৃষক।

এদিকে মোহনপুর ইউনিয়নের উজান রামগরে একটি বাঁধের প্রাক্কলন ও ডিজাইন নিয়ে শুরুতেই প্রতিবাদ করেছিলেন কৃষক। কিন্তু স্থানীয় পিআইসি ও পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী পাত্তা না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ বাস্তবায়ন করেন। বেড়িবাঁধের কথা বলে গ্রামকে বেড়ির বাইরে রেখে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করায় এখন উজান রামনগরের একটি অংশে বৃষ্টিপাতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কয়েকটি পরিবার বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। তারা যে স্থানে ধান শুকাত জলাবদ্ধতার কারণে সেটিও এখন জলমগ্ন। এ অবস্থায় উজান রামনগরের ১০ থেকে ১৫টি পরিবার চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে।

হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সদর উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শামছুজ্জামান সায়েম বলেন, ডোবরার পানিতে ছন্দোয়ার হাওরে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ডাকুয়ার হাওর পাড়ের পশ্চিমাংশের কৃষক এখন রাত জেগে বাঁধে পাহারা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ছন্দোয়ার হাওর তলিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বুক সমান পানিতে ধান কেটেছেন কৃষক।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, শুরুতে আমরা অপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু বাঁধের অভিযোগ পেয়েছিলাম। তবে এ কারণে কোথাও সমস্যা হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist