প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৫ মে, ২০১৮

মাতৃভূমিতে ফেরার আশায় এই ম্যারাথনের শেষ কোথায়!

সাহারা মরুভূমির প্রান্তে, আলজেরিয়া সীমান্তের কাছে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় সাহারা ম্যারাথনের। এটি আসলে একটি প্রতিবাদ। যারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন, তারা মূলত সবাই নিজ মাতৃভূমি থেকে নির্বাসিত। ফিরে যেতে চান নিজ শিকড়ের কাছে। ১৯৭৫ সালে পশ্চিম সাহারা মরুভূমির সাহারাউয়ি এলাকাটি নিয়ন্ত্রণে নেয় মরক্কো। তখন থেকেই অসংখ্য সাহারাউয়ি মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। তারাই আয়োজন করেন এই ঘাম ঝরানো ম্যারাথনের। খবর বিবিসির। প্রতি বছর আলজেরিয়ায় সাহারা মরুভূমিতে নিজেদের প্রতিবাদ আর মাতৃভূমির স্বাধীনতার দাবিতে একটি ম্যারাথন আয়োজন করেন তারা।

ওই ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন অ্যাথলেট সালাহ আমেদান। তিনি বলেন, ‘আমি আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য দৌড়াচ্ছি, যাদের বহুদিন দেখতে পাই না। আমার ছোট্ট পরিবারটি মরক্কোর দখলকৃত এলাকায় রয়ে গেছে। কিন্তু আমার সেখানে যাওয়া নিষেধ। দেড় বছর আগে আমার বাবা মারা গেছেন। তখনো আমি সেখানে যাওয়ার অনুমতি পাইনি।’ যাকে তিনি দখলীকৃত এলাকা বলেছেন, সেই এলাকা নিজেদের দক্ষিণ প্রদেশ বলে দাবি করে মরক্কো। প্রায় ৪০ বছর আগে ১৯৭৫ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এলাকাটি নিয়ন্ত্রণে নেয় মরক্কো। মরক্কোর জাতীয় দলের হয়ে পুরস্কার আর আরব অ্যাথলেট পুরস্কার পেয়েছিলেন আমেদান।

২০০০ সালে একটি প্রতিযোগিতার পুরস্কার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হলে, তিনি অবহেলার বিষয়টি উপলব্ধি করতে শুরু করেন। এর চার বছর পর ফ্রান্সে একটি দৌড়ানোর প্রতিযোগিতায় তিনি মরক্কোয় নিষিদ্ধ সাহারাউয়ি পতাকা উড়ান। এরপর থেকেই তাকে মরক্কোয় নিষিদ্ধ করা হয়।

আমেদান বলেছেন, পতাকা ওড়ানোর সময় আমি অনেকটা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলাম। আর প্রথমবার অনেক দায়িত্বও অনুভব করি। আমি যদিও নিজেকে আর আমার পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলেছি, কিন্তু আমি মনে করি আমি দখলীকৃত ভূমির মানুষজনের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি।

চার দশক আগের যুদ্ধের পর থেকেই অসংখ্য সাহারাউয়ি মানুষ প্রতিবেশী আলজেরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে ছয়টি শরণার্থী শিবিরে এখন বাস করছেন লাখ লাখ মানুষ। তারাই অংশ নিয়েছেন এই ম্যারাথনে।

অবশ্য মাতৃভূমির স্বাধীনতা নিয়ে এসব মানুষের স্বপ্ন এখন অনেকটা ফিকে হয়ে আসতে শুরু করেছে। কারণ ২৫ বছর আগে এই ভূখন্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু এখনো সেই ভোটের দেখা মেলেনি। আর তাই অনেক সাহারাউয়ি আবার অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার কথাও ভাবছেন।

সাহারাউয়ির এক সামরিক নেতা আলী সালাম সিতি মোহাম্মেদ বলেছেন, যা এক সময় জোর করে নিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেটি ফেরত নিতে হলেও শক্তি খাটিয়েই নিতে হবে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মরক্কো সরকারের কেউ বিবিসির সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি।

লায়ুম ক্যাম্পের গভর্নর মোহাম্মেদ বেসাত বলেছেন, ‘একপক্ষের মাধ্যমে শান্তি আসবে না। মরক্কোকে বাধ্য করতে হলে তাদের ওপর কোনো না কোনোভাবে চাপ তৈরি করতে হবে। দরকার হলে আমরা আবার যুদ্ধে জড়াব। কারণ আমরা সাহারাউয়ির সবাই একটি যোদ্ধা জাতি।’ ম্যারাথন শেষে সেখান আসা ভিকতোর সালাহ নামের একজন তরুণের সঙ্গে কথা হচ্ছিল বিবিসি সংবাদদাতার।

সালাহর কাছে তিনি জানতে চান এতসব জটিলতার মধ্যে তিনি নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কতটা আশা রাখেন? জবাবে সালাহ বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের নিজ ভূমিতে ফেরত যাওয়ার আগে সাময়িক একটি সময় আমরা পার করছি। একদিন আমরা সেখানে ফেরত যাব বলেই আমি আশা করছি। আশা ছাড়া মানুষের জীবনের আর কি থাকে?’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist