শিশির মাহমুদ, রাবি
রাবি ক্যাম্পাসের সবার প্রিয় আবু ভাইয়ের দুর্দিন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম ‘আবু ভাই’। তবে তার আসল নাম আবু আহমেদ। বিশেষ করে সত্তর, আশি, নব্বইয়ের দশক ও একুশ শতাব্দীর শুরুর শিক্ষার্থীদের কাছে ‘আবু ভাই’ এক ভালোবাসার নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রামের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে এই নামটি। কেননা অধিকাংশ আন্দোলনের পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন সবকিছুর আলোচনা ও সিদ্ধান্তের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ‘আবুর ক্যান্টিন’।
এক সময় শত মানুষ ও শিক্ষার্থীকে সহায়তা করা আবু আজ একটু সহায়তার অভাবে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন খুবই করুণভাবে। এক সময় কত গরিব শিক্ষার্থীর টাকা না থাকায় বাকিতে খাওয়ানো আবু ভাই আজ না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। নানা রোগ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। নিজে উপার্জন করার শক্তিটুকুও হারিয়েছেন। এখন আর ভালো নেই সেই আবু ভাই। বয়সে ইতোমধ্যে ৭৫ পেরিয়েছেন তিনি।
আবুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ৪ বছর আগে পায়ের অপারেশন করান আবুু আহমেদ। এরপর থেকেই শরীরে বাসা বাঁধতে থাকে নানা রোগ। বর্তমানে ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যার পাশাপাশি তার দুইটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। টানা ২০ দিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাটিয়ে গত ২০ এপ্রিল বাসায় ফিরেছেন। তবে সুস্থ হওয়ার লক্ষণ তেমন নেই। শুধু বিছানায় পড়ে আছেন। আর দিন গুনছেন মৃত্যুর! তিন ছেলের সবাই আলাদা থাকেন। দুই মেয়েরও বিয়ে হয়ে গেছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টাকার ওষুধ প্রয়োজন হয় আবু আহমেদের। যা পরিবারের পক্ষে বহন করা কঠিন। সে জন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে তার পরিবার। আবু আহমেদের ব্যক্তিগত নম্বরে (০১৭২৩১৫৩৪৬০) বিকাশ করে পাঠানো যাবে সহযোগিতা।
কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী আবুর জন্য কিছু টাকা তুলে তার বাড়িতে দিয়ে আসেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, উনার অবস্থা দেখে চোখে জল চলে আসে। মনে হচ্ছে উনি বেঁচে থেকেই বেশি কষ্টে আছেন। কিছু খেতে পারছেন না, ঠিকমতো প্রস্রাব হয় না, চলাফেরাও করতে পারেন না। এর ওপরে টাকা পয়সাও নেই যে চিকিৎসা করাবেন।
সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকেই ক্যাম্পাসে ক্যান্টিন পরিচালনা করে আসছিলেন আবু আহমেদ। তবে স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সালে তিনি ক্যান্টিনটি পুনরায় স্থাপন করেন বর্তমান শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার টিএসসিসির পূর্ব পাশে। এরপর থেকে তার ক্যান্টিনের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়েছে। দীর্ঘদিন চালানোর পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০০৭ সালের দিকে বন্ধ করে দেন দোকান। এছাড়াও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ ওইসময় বিভিন্ন আন্দোলনের সভা, প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আবু ভাইয়ের ক্যান্টিন ছিল অন্যতম। সর্বোপরি উনি শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে ছাত্রনেতাদের খুব বুঝতে পারতেন।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে বর্তমান ১ম ও ৪র্থ বিজ্ঞান ভবনের মাঝখানের জায়গাতে আবারও ক্যান্টিন খোলেন আবু আহমেদ। তবে অসুস্থতার কারণে এক বছর আগে আবারও বন্ধ হয়ে যায় তার ক্যান্টিন। এখনো বন্ধই রয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে তার আয়ের রাস্তা। কথা তেমন বলতে পারেন না। শুধু চেয়ে থাকেন অপলক। যেন একটু বেঁচে থাকার আশ্রয় খুঁজে ফিরছেন আবু আহমেদ।
"