পাবনা প্রতিনিধি
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সুযোগবঞ্চিত পাবনার ১১ শহীদ পরিবার
পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের চর আশুতোষপুর গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নির্মম হত্যার শিকার ১১ শহীদের পরিবার আজও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসেনি। এমনকি স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও তাদের খোঁজ-খবর নেয়নি কেউ। ওই শহীদ পরিবারের অনেকেই বর্তমানে ঝিঁয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
ওই এলাকায় সরেজমিন গেলে এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানায়, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দের (১৯৭১ সাল) ৭ আশ্বিন মাঝ নদীতে নিয়ে এই ১১ জনকে একসঙ্গে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা।
এলাকাবাসী জানায়, ওইদিন আশুতোষপুর গ্রাম থেকে বেলা ১ টায় ১৩ জন নৌকাযোগে পাবনা শহরতলির পাশে হাজিরহাটে যান। হাটের কাজকর্ম শেষ করে তারা বিকাল ৩টার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন, পথে তাদের আটক করে পাকিস্তানি বাহিনী। ওইদিনই পাকিস্তানি হানাদাররা রাত ১২টার দিকে তাদের গুলি করে হত্যা করে হাজিরহাটের দক্ষিণে মাঝ নদীতে নিয়ে ফেলে দেয়। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা ২ শিশুকে ছেড়ে দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। পর দিন সকালে স্থানীয়রা ১১ জনের লাশ উদ্ধার করে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে।
পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ওইদিন নিহতরা হলেন কফেজ উদ্দিন শেখ, মাহাম শেখ, আজগর আলী শেখ, কুটু খাঁ, কুরান শেখ, কামাল মালিথা, গুলাই শেখ, আমোদ আলী মোল্লা, তাছের ব্যাপারি, নদু সরদার, হোসেন মন্ডল।
এ ব্যাপারে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মকসেদ আলী জানান, ঘটনার দিন ছিল শুক্রবার। শার্ট গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায় প্রতিদিনের মতো হাটের দিন তারা ১৩ জন কেনাকাটার জন্য সকালে হাজিরহাটে আসেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের খুঁজতে পাবনা হাজিরহাট এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় তাদের বন্দুকের গুলি না বের হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। পরে রাজাকার বাহিনী প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে তারা নদীর দিকে গেলে এই ১১ জনকে মুক্তিযোদ্ধা মনে করে ধরে এনে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
শহীদদের মধ্যে পাঁচজনের স্ত্রী বর্তমানে বেঁেচ আছেন। তারা এখন বৃদ্ধ। কেউ কেউ মানুুষের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে দিন যাপন করেন। তারা হলেন ১. আমোদ আলী শেখের স্ত্রী সুন্দরী বেগম (৮৫) ২. কালাম মালিথার স্ত্রী সাইসুনা খাতুন (৭৮) ৩. হোসেন মন্ডলের স্ত্রী খোদেজা খাতুন (৭৯), ৪. নদু শেখের স্ত্রী জয়দা খাতুন (৮৫) ও ৫. কুরান শেখের স্ত্রী ছামিরন বেগম (৮৬)।
শহীদ গুলাই ব্যাপারীর মেয়ে জাহানারা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর থেকে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি, দেশের বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছেন। কিন্তু আমরা আজ পর্যন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি। আমাদের খোঁজ-খবর পর্যন্ত কেউ নেয়নি।
একজন শহীদের ছেলে মোহাম্মদ আলী জানান, দেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি পাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের পরিবারে অনেক শিক্ষিত ছেলেমেয়ে থাকার পরও আমরা তা পায়নি।
"