নিজস্ব প্রতিবেদক
আলোচনায় বক্তারা
সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসির সদিচ্ছাই যথেষ্ট
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা আছে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনে কমিশনের সদিচ্ছা থাকতে হবে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল সোমবার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।
১/১১ সময়কার নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যে পার্টি বিরোধী দলে থাকে, সে পার্টি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে বিরাট ভূমিকার মধ্যে চলে যায়। ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনে সেনা চেয়ে সিইসি পাননি। আবার ১১৭ জন মানুষ মারা গেলে তাকে ইমপিচমেন্টের (অভিশংসন) জন্য জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়। সেই নির্বাচন হয়েছিল রক্তাক্ত নির্বাচন। আমি বলছি না পত্র-পত্রিকাতেও লেখা হয়। এমনকি সিইসি আবু সাঈদ আগেই বলেছিলেন, এই নির্বাচনে রক্তপাত হবে। এর জন্য দায়ী থাকবে সরকার।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি না সেনাবাহিনী নিয়ে বিরোধী দল, সরকারি দলের কী সমস্যা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী না দিলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমি মনে করি না। কেননা, ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে এক দিনেই ভোটগ্রহণ করা হয়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে এত বড় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা ও নিরাপত্তা দেওয়া দুরূহ। নির্বাচনী বাজেটের ৭৫ শতাংশ ব্যয় করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পেছনে। তাই নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা উচিত।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোট ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার সুপারিশও করেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স আগের রাতে কেন্দ্রে না পাঠিয়ে, ভোটের দিন সকালে পাঠাতে হবে। আর ভোটের সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টার পরিবর্তে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত করা উচিত। কেননা, আমাদের দেশে ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারা একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে। এটা বন্ধ করতে হলে দিনের বেলায় ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স বিতরণ করতে হবে।’
সংগঠনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ, বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, সিটি নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের প্রচারকাজে সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। সেনা মোতায়েনের জন্য বিএনপি দাবি জানালেও নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা নেই। যদিও সংবিধানে সেনা মোতায়েনের ক্ষমতা ইসির রয়েছে।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৃণমূলে সংসদীয় পদ্ধতির স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক সৃষ্টির জন্য একটি অভিন্ন আইনি কাঠামো প্রণয়ন করা দরকার। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের জনবল সমস্যা সমাধানে ‘স্থানীয় সরকার ক্যাডার’ নামে আলাদা সার্ভিস করতে হবে।
খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন গঠন হবে আইনি কাঠামোর ভিত্তিতে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে সার্চ কমিটির মাধ্যমে। কাজেই এর কোনো আইনি ভিত্তিই নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের আইনি ভিত্তি দরকার।’
"