প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কেন বন্ধ করলেন কিম?
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এবং আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু কেন? দেশটির নেতা কিম জং-উনের বিবৃতির বরাত দিয়ে কেসিএনএ প্রচার করেছে, ‘নর্দার্ন পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রটি তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে সক্ষম হয়েছে, সেটির আর প্রয়োজন নেই। এখন তার মূল লক্ষ্য উত্তর কোরিয়ার সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বিকাশ এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।’ খবর বিবিসির। এই ঘোষণা কিম জং উন এমন সময় দিলেন যখন খুব শিগগির তিনি দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ বৈঠকের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। তার প্রথম বৈঠকটি হবে এ মাসের ২৭ তারিখ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। অন্যটি মে মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের সদস্য এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত পান্ডে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ইতিহাস, তার ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করলে, আশাবাদে রাশ টানতে হবে। কারণ হিসাবে পান্ডে বলছেন, প্রথমতÑবন্ধের যুক্তি হিসাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জনের যে কথা প্রেসিডেন্ট কিম দাবি করেছেন, সেটা একবারে অবিশ্বাস করার মতো নয়।
ভারত ও পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘১৯৯৮ পর্যন্ত এই দুই দেশের প্রত্যেকে ছয়টি করে পারমাণবিক পরীক্ষার পর তারা আর কোনো পরীক্ষা করেনি এবং সারা বিশ্ব মেনে নিয়েছে এরা পারমাণবিক শক্তিধর। সে রকম ছয়টি পারমাণবিক পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়াও একইভাবে নিশ্চিত হয়েছে তারা অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে।’
এ বিষেজ্ঞের মতে, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার পঞ্চম এবং ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষা দুটো ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়া দাবি করে, তারা যেকোনো পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ছোড়া যায় এমন আকারের এবং ওজনের পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পেরেছে। ধারণা করা হয়, ওই বোমার ক্ষমতা নাগাসাকিতে আমেরিকার ফেলা বোমার চেয়ে তিনগুণ শক্তিধর।
২০১৭ সালে পরীক্ষা করা বোমার শক্তি আরো অনেক বেশি। ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালে পরীক্ষার পর ভূকম্পন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীদের ধারণা হয়েছে উত্তর কোরিয়া এখন যেকোনো শহর ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করেছে।
প্রেসিডেন্ট কিম বলেছেন, পারমাণবিক কর্মসূচিতে সাফল্যের পর তিনি এখন দেশের অর্থনীতির দিকে মনোনিবেশ করবেন। অঙ্কিত পান্ডে মনে করেন, কিমের এই বক্তব্য ফেলে দেওয়া যায় না। তিনি হয়তো খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবি করবেন। পান্ডের মতে, উত্তরটি সহজÑ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকটি কিমের জন্য একটি বড় পুরস্কার। তার বাবা বা দাদা যা পারেননি, তিনি তা করে দেখাতে চলেছেন। পারমাণবিক পরীক্ষার একটি স্থান বন্ধ করে উত্তর কোরিয়ার যে ক্ষতি হবে, তার চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে বসে মুখোমুখি দেনদরবার করার সুযোগের মূল্য অনেক বড়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়া বা আমেরিকা চায় উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত হতে হবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট কিমের ঘোষণায় তার কোনো ইঙ্গিতই নেই। এখন পর্যন্ত তিনি যে পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়েছেন তা ধ্বংসের বা পরিত্যাগের কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি।
"