মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট

  ২২ এপ্রিল, ২০১৮

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা

জনবল সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে কিন্তু বাড়ছে না সেবাদানের জন্য দরকারি জনবল। প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় অর্ধেক জনবল নিয়ে সেবা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিচ্ছেন সেখানকার চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জনবল সংকটের কারণে কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। সিরিয়াল পেতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে অপারেশনের রোগীদের। এ অবস্থায় রাজনৈতিক নেতা, ডাক্তারের নিকটজনের পরিচয় দিয়ে কিংবা প্রভাবশালীদের শরণাপন্ন হয়ে তবেই চিকিৎসাসেবা নেওয়া সম্ভব হয়। আর এর বাইরে সিরিয়াল পেতে অনেককে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন। পাশাপাশি রয়েছে রোগীর একাধিক সহায়তাকারী, হাজার হাজার দর্শনার্থী। তার ওপর ওষুধ সংকট, দালাল, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও বাটপাড়দের দৌরাত্ম্য। এমন পরিস্থিতিতে চলছে ওসমানী মেডিকেলের চিকিৎসাসেবা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ২৬টি ওয়ার্ডে ৫০০ শয্যার চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ দিয়ে চলছে ৯০০ শয্যার হাসপাতালটি। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী, দর্শনার্থী ও চিকিৎসক সংকটসহ বিভিন্ন দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন সেখানকার ভুক্তভোগীরা। এই সুযোগে রোগী ও দর্শনার্থীকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের সিন্ডিকেট। কেউ ওষুধ পাচারে, কেউ দালালিতে কেউবা গেটের পাস বাণিজ্যে ব্যস্ত। এই সিন্ডিকেটে অনেক ডাক্তার ও স্টাফ জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের অমার্জিত আচার-ব্যবহার, কথাবার্তায় ক্ষুব্ধ ও নাখোশ রোগী এবং তাদের স্বজনরা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে হাসপাতালটি ৫০০ থেকে ৯০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু শয্যা বাড়ানো হলেও বাড়েনি জনবল। বর্তমানে হাসপাতালে শয্যার মধ্যে রয়েছে নন পেয়িং ৬৩০টি, পেয়িং ২২৪ ও কেবিন ৪৬টি। এ হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সংখ্যা রয়েছে ২ হাজার ২৬৫টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১ হাজার ৪৪ জন। বিপরীতে শূন্য রয়েছে ১ হাজার ২২১টি পদ। প্রথম শ্রেণির চিকিৎসক ও কর্মকর্তার ৪৪৩টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ২১৭ জন। শূন্য রয়েছে ২২৫টি পদ। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার পদ রয়েছে ১৪টি, যার ১২টি পদই শূন্য। হাসপাতালটিতে নার্সিং কর্মকর্তার পদ রয়েছে ৮৬২টি। সেখানে কর্মরত আছেন ৪৩৩ জন এবং খালি পদের সংখ্যা ৪২৯টি। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর ২৩০টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৫২টি। আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ৭১৭টি পদের মধ্যে মাত্র ৩১৪টি পূর্ণ আছে। শূন্য রয়েছে ৪০৩টি পদ। হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা যায়, হাসপাতালটি ৯০০ শয্যায় উন্নীত হলেও গড়ে প্রতিদিন হাসপাতালের ইনডোরে চিকিৎসা নেন প্রায় ২ হাজার রোগী। এছাড়া বহির্বিভাগেও প্রতিদিন চিকিৎসা নিয়ে থাকেন প্রায় ৩ হাজার রোগী।

এদিকে হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের রয়েছে নানা অভিযোগ। গতকাল শনিবার এই প্রতিবেদকের কথা হয় ১১নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েজন রোগীর সঙ্গে। তারা জানান, ওয়ার্ডে সিট খালি থাকা সত্ত্বেও তাদের ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। সিট চাইলেই ওরা টাকা দিতে বলে। খাবারের মান নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। রোগীর স্বজনরা বলেন, পরিমাণের কম খাবার বিলি করা হয়। তবে টাকা দিলে বেশি খাবার মেলে। হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা। শৌচাগারগুলো অপরিষ্কার, সেখানে দুর্গন্ধে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া কঠিন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ ভালো নয়।

দেখা যায়, হাসপাতালের ২৬টি ওয়ার্ডে ২৬টি শৌচাগার রয়েছে। আর বহির্বিভাগে আছে ১০টি শৌচাগার। প্রয়োজনের তুলনায় শৌচাগার একেবারেই অপ্রতুল। জানতে চাইলে হাসপাতালের উপপরিচালকের দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ১১১ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রতিদিন কয়েক দফা শৌচাগারগুলো পরিষ্কার করে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে কিছুক্ষণ পরই এগুলো অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়া হাসপাতালের এমআরআইসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মেশিন নষ্ট। বিভিন্ন পরীক্ষা বেশি দামে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হয়। ডাক্তারদের সঙ্গে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. দেবপদ রায় বলেন, বাড়তি রোগীর সেবা দিতে চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের হিমশিম খেতে হয়। শয্যা না পেয়ে অনেক রোগী বারান্দা ও হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে এখন হাসপাতালের রোগীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। শূন্য পদগুলোতে জনবল নিয়োগ করা হলে সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক জানান, প্রয়োজনের চেয়ে অর্ধেক জনবল নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এজন্য কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বাড়তি রোগীর কারণে ওষুধ সংকটও দেখা দেয়। জনবল সংকট নিরসন হলে রোগীদের আরো ভালো সেবা দেয়া সম্ভব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist