জাবি প্রতিনিধি

  ২১ এপ্রিল, ২০১৮

জাবিতে প্রশাসনে বিরোধ অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে উপাচার্য অধ্যাপক ফরাজানা ইসলামপন্থি ও উপাচার্যবিরোধী সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরিফ এনামুল কবিরপন্থি শিক্ষকরা। বছরের শুরুতে উপাচার্য হিসেবে ফারজানা ইসলামের পুনঃনিয়োগকে কেন্দ্র করে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন দেখা দেয়। সম্প্রতি নয়টি আবাসিক হলে প্রভোস্ট পদে পরিবর্তন আনলে এই দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হয়। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করছেন উভয় পক্ষের শিক্ষকরা। শাখা ছাত্রলীগের নেতারা উপাচার্যের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। আর দুই গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপাচার্যবিরোধী গ্রুপের শিক্ষকরা ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতানায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’র ব্যানারে এবং উপাচার্যপন্থি গ্রুপের শিক্ষকরা ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’র ব্যানারে কর্মসূচি পালন করছেন। এই দুই গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থান সাধারণ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভাবিয়ে তুলেছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার, প্রক্টরিয়ার বডির অপসারণ, শিক্ষকদের দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা তদন্তে নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের দাবিতে পাঁচদিনের কর্মসূচি পালন করছেন। কর্মসূচিগুলো হলো, বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত শিক্ষক, ছাত্র সংগঠন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও জনসংযোগ, আগামী মঙ্গলবার পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে কালো পতাকা প্রদর্শন এবং বুধবার উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আগামী বৃহস্পতিবার কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তারা। এর আগে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল এলাকায় পরিবহন ডিপোতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এবং সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩, স্ট্যাটিউট ও সিন্ডিকেট পরিচালনা বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ডাকা ধর্মঘটের অংশ হিসেবে পরিবহন ডিপোতে তালা দেওয়া এবং তাতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এদিকে, উপাচার্যবিরোধীদের এই আন্দোলনকে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা বলছেন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে তারাও মানববন্ধন, মতবিনিময় সভার মতো কর্মসূচি পালন করছেন।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করেন। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের ৪০-৫০ জন নেতাকর্মীর সঙ্গে বসেন ফারজানা ইসলামের অনুসারী শিক্ষক-কর্মকর্তারা। সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি মো. জুয়েল রানা উপাচার্যের পাশে থাকার ঘোষণা দেন। এ সময় উপাচার্য বলেন, ‘আমরা ধৈর্যের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি।’

এরপর রাত পৌনে ৮টার দিকে উপাচার্য সাংবাদিক সমিতি, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, সাংস্কৃতিক জোট, জহির রায়হান চলচ্চিত্র সংসদ, প্রেস ক্লাবের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিমিয় করেন। এ সময় সহকর্মীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শাস্তি পাওয়া এক শিক্ষককে প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েন উপাচার্য। এছাড়া জাকসু নির্বাচন, র‌্যাগিং, হলে আসন বণ্টনে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণহীনতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের হাতাহাতির ঘটনায় দুপক্ষেরই তীব্র সমালোচনা করেন মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারীরা।

এ সময় উপাচার্য বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছিল তাতে আরো বড় শাস্তি হতে পারত। কিন্তু অভিযোগ দায়েরের পর অভিযোগকারী তার ওপর সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন। অভিযোগকারী নিজ আগ্রহে নানা কাজে ওই শিক্ষককে সহযোগিতা করেছেন, যোগাযোগ করেছেন। তারা একটি ভালো সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন।’

এছাড়া বৃহস্পতিবার দুপুরে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম গতিশীল রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। এ সময় প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন হলের প্রভোস্টসহ প্রায় এক শ শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist