এম এ রউফ, সিলেট

  ২০ এপ্রিল, ২০১৮

জিন-ভূত তাড়ানোর ফকির সেজেও রেহাই মিলল না

সিলেটের প্রতারক কিশোরগঞ্জে গ্রেফতার

অভিযোগ ছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। ফয়জুর রহমানকে পুলিশ সদস্যরা অপহরণ করার পর হত্যা করে লাশ গুম করেছে। আর্জিতে এসব কথা লিখে আদালতে দরখাস্ত করেন তার স্ত্রী ফারহানা বেগম। শেষে এই মামলার তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে এরই মধ্যে পুলিশের কাছে আসে নতুন তথ্য। যাকে ‘অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ, সেই ফয়জুর রহমানকে কৌশলে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে কিশোরগঞ্জে জিন-ভূত তাড়ানোর নামে মানুষকে প্রতারিত করত। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উদ্ধার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। এসব তথ্য জানিয়েছে সিলেট পুলিশ।

বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় হলেও কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকায় জিন-ভূত তাড়ানোর নাম করে তাবিজ-কবজ এবং কুফরি কালামের ভেলকিবাজির কাজ করত ফয়জুর। এভাবে মানুষ ঠকিয়ে হাতিয়ে নিত টাকা-পয়সা। পুলিশ জানায়, ভৈরব শহরের দুর্জয় মোড় থেকে গত মঙ্গলবার দুপুরে ফয়জুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে কানাইঘাটে নিয়ে এসে তার বাড়ির সামনে কলাবাগানের মধ্য থেকে মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় একটি পাইপগান ও একটি লম্বা ছোরা উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আগেই কানাইঘাট থানায় একটি মামলা ছিল। গ্রেফতারের পর অস্ত্র উদ্ধার করে অস্ত্র

আইনে আরেকটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ফয়জুর রহমানকে।

কানাইঘাট উপজেলার চরিপাড়া গ্রামের মৃত আবু ছিদ্দিকের ছেলে ফয়জুর রহমান। এসব তথ্য জানিয়েছেন সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম। জানা যায়, কানাইঘাট উপজেলার চরিপাড়া গ্রামের আবু ছিদ্দিকের ছেলে হবিবুর রহমান ওরফে হরুহুনাকে গ্রেফতার করতে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তার বাড়িতে অভিযান চালায় থানা পুলিশ। পুলিশের দাবি, ওই সময় ‘ডাকাত’ হবিবুর রহমান ও তার সহযোগীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় এসআই বশির আহমেদসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ডাকাতরা পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাকালে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে। কিছু সময় পর ডাকাতরা ফের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। পুলিশও মাটিতে শুয়ে পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলি চলার সময় হবিবুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন।

পুলিশ বলছে, হবিবুর রহমান তার সহযোগীদের গুলিতেই গুলিবিদ্ধ হন এবং পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে তবে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।

গোলাগুলির খবর পেয়ে কানাইঘাট থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তারা আহত পুলিশ সদস্য ও হবিবুর রহমানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা হবিবুর রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় কানাইঘাট থানার এসআই আবু কাউছার বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১২ থেকে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলার প্রধান আসামি করা হয় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হবিবুর রহমানের ভাই ফয়জুর রহমানকে।

সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম জানান, ওই গোলাগুলির ঘটনার পর ‘সহযোগী ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের প্ররোচনায়’ ফারহানা বেগম বাদী হয়ে আদালতে একটি দরখাস্ত করেন। সেখানে তিনি কানাইঘাট থানার ওসিসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তার স্বামী ফয়জুর রহমানকে অপহরণ করে লাশ গুম করার অভিযোগ করেন। এই দরখাস্তটির আলোকে তদন্তে নামে পিবিআই।

এদিকে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছিলেন কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ নুনু মিয়া। গোপন সংবাদে পুলিশ জানতে পারে, ফয়জুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকায় জিন-ভূত তাড়ানোর নামে তাবিজ-কবচ বিক্রির বাটপারিতে লিপ্ত আছে। তাকে গ্রেফতারে ভৈরব থানা পুলিশের সহায়তায় একজন মহিলাকে রোগী সাজিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। সেই ফাঁদে পা দেন ফয়জুর রহমান। গত মঙ্গলবার দুপুরে ভৈরব শহরের দুর্জয় মোড় থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে।

সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম জানান, গ্রেফতারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুর রহমান তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার বিষয় স্বীকার করেন। গত বুধবার ভোর রাত সাড়ে ৪টায় তাকে নিয়ে তার কানাইঘাটে বাড়ির সামনের কলাবাগানে অভিযানে যায় পুলিশ। সেখানে মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় দেশীয় তৈরি একটি পাইপগান ও একটি লম্বা ছোরা উদ্ধার করা হয়। ফয়জুর রহমান তার দলের কাছে ‘আরো আগ্নেয়াস্ত্র আছে’ বলে স্বীকার করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist