প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
ভারতে ধর্ষণবিরোধী কার্টুনে রাম-সীতা
কাশ্মীরের সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের পক্ষ নেওয়া কট্টরপন্থি হিন্দু সমর্থকদের বিদ্রুপ করে হিন্দু দেবতা রাম ও তার স্ত্রী সীতার মধ্যকার আলোচনা কার্টুনের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন কার্টুনিস্ট স্বাতী ভাদলামুদি। কার্টুনে সীতা রামের কাছে এই বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন যে তাকে রামের সমর্থকদের বদলে রাক্ষসদের রাজা রাবণ অপহরণ করায় তিনি বেশি স্বস্তি পেয়েছেন। এই কার্টুনটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে হিন্দু কট্টরপন্থিদের নানা ধররের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে ভালদামুদিকে। এই কার্টুস্টি জানিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমের হুমকির কারণে তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বিবিসি গতকাল এ সংবাদ প্রকাশ করে।
তবে ভাদলামুদি বলেছেন যে, এসব হুমকি তাকে আরো ‘শক্তিশালী’ করেছে। তার কার্টুনটি সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হলেও কার্টুনে হিন্দু পুরাণ রামায়ণের চরিত্র ব্যবহার করায় তা ব্যাপক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। বিবিসি কে ভাদলামুদি বলেন, ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন তৈরি করা তার শখ।
তিনি বলেন তার কার্টুনটি সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় আসা দুটি ঘৃণ্য ধর্ষণের ঘটনার প্রতি নিন্দার বহিঃপ্রকাশ। ভারত অধ্যুষিত কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় আট বছর বয়সী এক শিশুকে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর অভিযুক্ত হিন্দু ব্যক্তিদের সমর্থনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির দুই মন্ত্রী মিছিলে যোগদান করলে বিক্ষোভ প্রকাশ করে মানুষ।
আরেকটি ঘটনায় ১৬ বছর বয়সী একজন শিশু বিজেপির একজন আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ওই ব্যক্তির বাসার বাইরে আত্মহননের চেষ্টা চালায়। বিবিসি সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ভাদলামুদি বলেন দুটি ঘটনাই ‘ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে সম্পৃক্তÑ একটি ক্ষেত্রে নেতা অপরাধ সংঘটন করেছেন, আরেকটিতে নেতারা অপরাধীদের সমর্থন করেছেন।’
ভাদলামুদি বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তদের যারা সমর্থন করেছেন তাদের অধিকাংশই নিজেদের দেবতা রামের ‘ভক্ত’ বা ‘উপাসক’ বলে দাবি করেছেন।
কার্টুনটি প্রকাশিত হওয়ার পর অনলাইনে অসংখ্য হুমকি পেয়েছেন তিনি। তাকে গ্রেফতারের দাবিই জানিয়েছেন অনেকে। কিছু হুমকিতে হিন্দু মৌলবাদের সমালোচনা করায় সম্প্রতি হত্যা হওয়া ভারতীয় সাংবাদিকের উদাহরণও টেনে আনা হয়। সামাজিক মাধ্যমের হুমকির কারণে তার নিরাপত্তার বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যরাও চিন্তিত রয়েছেন বলে জানান তিনি। একটি কট্টরপন্থি দল মিজ ভাদলামুদির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগ আনলে একটি মামলা গ্রহণ করে পুলিশ। নারী সংগঠনগুলো আর ভারতীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন তার বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগের নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে ‘সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
গত কয়েক বছরে হিন্দু মৌলবাদের বিরোধিতা করা সাংবাদিকরা সামাজিক মাধ্যমে মাত্রাছাড়া সমালোচনার শিকার হয়েছেন। নারী সাংবাদিকদের অনেককেই ধর্ষণ ও আক্রমণের হুমকি দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস’ ভারতকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদানের হিসেবে অনিরাপদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তাদের গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৯২ থেকে ভারতে অন্তত ২৭ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।
"