কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের দুই শাখায় অনিয়ম
একই অপরাধে এক কর্মকর্তার সাজা আরেকজন বহাল
কুষ্টিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের দুইটি শাখায় ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে একই ধরনের অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির ঘটনায় একটি শাখার ব্যবস্থাপকের শাস্তি হলেও, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করার কারণে পার পেয়ে যাচ্ছেন অপর শাখার ব্যবস্থাপক। মুখ খুলছেন না ব্যাংকটি সংশ্লিষ্ট শাখার ডিজিএম। আর এই অনিয়মের জন্য বলিরপাঁঠা হয়েছেন এক নিরীহ মুদি দোকানদার। মামলা আতঙ্কে ভুগছেন তিনি এবং তার পরিবার। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার কুমারখালী উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মুদি দোকানদার হোসেন আলী। তার বাবার নাম জসিম আলী। ২০১৬ সালে কাজীপাড়া রেলগেটে ছোট্ট পরিসরে মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করেন। কিছুদিন পর এলঙ্গী রেলগেটপাড়ার সোনা শাহর ছেলে এসমত শাহ তাকে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিতে উৎসাহিত করেন। হোসেন আলীও ঋণ নেওয়ার আগ্রহে এসমতের কাছে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি দেন। জানা গেছে, এসমত শাহ কোনো ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারী নন, তবে অগ্রণী ব্যাংক স্টেশন রোড শাখা কুষ্টিয়ার তৎকালীন ম্যানেজার সুমন রায়হান খানের ঘনিষ্ঠজন। গত ২০১৬ সালের ১৯ জুন তারিখে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন হোসেন আলীর নামে। (সঞ্চয়ী হিসাব নং ৯২০০০০৯৪৪৩৮০৬)। সব ধরনের নিয়মকানুনের থোরাই কেয়ার করে সুমন রায়হানের সহযোগিতায় এসমত শাহ নন এমআইসিআর চেকে স্বাক্ষর করে নেয়। একই দিনে হোসেন আলীর নামে এক লাখ টাকা লোন অনুমোদন করে ওই সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে জমা করে, সেই সময়েই জমাকৃত এক লাখ টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয় হোসেন আলীর অনুপস্থিতিতে।
এদিকে, হোসেন আলী এসমতের কাছে জানতে চায় লোন অনুমোদন হয়েছে কি না। কিন্তু এসমত শাহ সরাসরি জানিয়ে দেয় ‘লোন হয়নি’। তবে পুনরায় ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড দিলে অগ্রণী ব্যাংক কুমারখালী শাখা থেকে লোন অনুমোদন করে দেওয়ার আশ^াস দেন। সরল বিশ^াসে হোসেন আলী পুনরায় এসমত আলীর কাছে ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড দেন। ছবি এবং কার্ডের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে গত ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে এবার কুমারখালী শাখায় আরেকটি
সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন। যার হিসাব নং ০২০০০০৮৮০১৬৪২। এই একাউন্টের অধীনে গত ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ তারিখে ৬০ হাজার টাকা লোন অনুমোদন হয়ে সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে জমা হয় এবং পূর্বের ন্যায় একই একাউন্ট থেকেও টাকা উত্তোলন কওে নেওয়া হয় হোসেন আলীর অনুপস্থিতিতেই।
দীর্ঘদিন এসমত শাহের সঙ্গে হোসেন আলী যোগাযোগ করতে না পারায় কুমারখালী শাখার ম্যানেজার খন্দকার আবদুল মান্নানের কাছে বিষয়টি জানতে গেলে, ম্যানেজার হোসেন আলীকে সুমন রায়হান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ম্যানেজারের কথা মতো হোসেন আলী সুমন রায়হান খানের সঙ্গে দেখা করে জানতে পারে লোন অনুমোদন হয়নি। কিন্তু ব্যবসার স্বার্থে সুমন রায়হান খান ১৫ হাজার টাকা হোসেন আলীকে দিয়ে সহযোগিতা করেন। তবে বাদসাধে অগ্রণী ব্যাংক স্টেশন রোড শাখা থেকে হোসেন আলীর নামে শাখা-/৭১৬-১-ঋণ আদায়/১৩৭/১৭ ডিসেম্বর ১ লাখ ৯ হাজার ৫২টাকা লোন পরিশোধের চিঠি। এর কিছুদিন পর কুমারখালী শাখা থেকে হোসেন আলী কাছে ফোন করে জানতে চাওয়া হয় ক্ষুদ্র লোনের কিস্তি পরিশোধ করছে না কেন? দুইটি ঘটনা নিয়ে কূলকিনারা হারিয়ে ফেলেন হোসেন আলী। দৌড়াতে থাকেন এসমত শাহের পেছনে।
এই বিষয় নিয়ে গত ২০১৮ সালের ৬ মার্চ তারিখে এসমত শাহের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যাংকের কেউ না, আমি কাউকে লোন পাইয়ে দেই নাই।’
বিষয়টি নিয়ে কুমারখালী অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে, তার অনুপস্থিতিতে কথা হয় সিনিয়ার অফিসার রোজদার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি একান্তই ম্যানেজার স্যারের ব্যক্তিগত, হোসেন আলী সর্ম্পকে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’ ৮ মার্চ পুনরায় সেখানে গেলে জানা যায়, অদৃশ্য ব্যক্তিরা লোনের সমুদয় অর্থ পরিশোধ করে দিয়েছে। আবারও ১৩ মার্চ ম্যানেজার খন্দকার আবদুল মান্নান এর সঙ্গে কথা বলতে গেলে, তিনি চরমভাবে রাগান্বিত হন। উল্টো এ প্রতিবেদককে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি বিষয়টি নিয়ে এত উৎসাহী কেন? দফায় দফায় আপনি ব্যাংকে আসেন কেন?’ ম্যানেজার সাহেব স্থানীয় সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেন। সর্বোপরি এই প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
একই ব্যক্তির নামে একই ব্যাংকে একই শ্রেণির একাধিক অসামঞ্জস্য লোন হওয়ার দায়ে ম্যানেজার সুমন রায়হান খান সাময়িক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। আর ম্যানেজার খন্দকার আবদুল মান্নান খান বহাল তবিয়্যতে আছেন। বিষয়টি নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ডিজিএম সাইফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমি কোনো কথা বলতে চাই না।’
"