মহসীন শেখ, কক্সবাজার

  ১৬ এপ্রিল, ২০১৮

পাহাড় কাটার অভিযোগ

কক্সবাজারে ঝুঁকিতে বিটিসিএলের টাওয়ার

কক্সবাজারের পাহাড়খেকো ইলিয়াছ সওদাগরের কারণে কক্সবাজার শহরে পাহাড়ের অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। নির্বিচারে তার পাহাড় কাটার বিষয়টি প্রায়ই আলোচিত হলেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় ভয়ঙ্কর এই পাহাড়খেকো। তার পাহাড় কাটার ধ্বংসযজ্ঞও সমানতালে অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে কলাতলী বাইপাস মোড়ের টিঅ্যান্ডটি পাহাড় কেটে সাবাড় করছে এই ভূমিদস্যু। পাহাড় কেটে ভূমি সমতল করে করা হয়েছে প্লট। এই প্লটগুলো বিক্রি করছে কোটি টাকায়। অন্যদিকে পাহাড় কাটার ফলে প্রবল ঝুঁকির মুখে পড়েছে সরকারি সম্পত্তি বিটিসিএলের মাইক্রোয়েভ টাওয়ারটি।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে রাত-দিনে ভাড়াটে মাস্তান ও শ্রমিক দিয়ে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটলেও ভূমিদস্যু ইলিয়াছ সওদাগরের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই নিয়ে স্থানীয়দের নানা অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, টিঅ্যান্ডটি পাহাড়ে অবস্থিত বিটিসিএলের টাওয়ারটি কারণে এই পাহাড়ের নামকরণ হয় টিঅ্যান্ডটি পাহাড়। এই পাহাড়ে নজর পড়ে ভূমিদস্যু ইলিয়াছ সওদাগরের। নানা কৌশলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কিছু লোকজনকে ম্যানেজ করে পাহাড়ের দক্ষিণের বিশাল অংশ দখল করেন ইলিয়াছ সওদাগর। দখলে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছেন। রাতে ৩০ থেকে ৫০ শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কাটা চলে। এরই মধ্যে পাহাড় কেটে সমতল ভূমি বানানো হয়েছে। ওই ভূমিতে ইটের দেয়াল দিয়ে বানানো হয়েছে নির্দিষ্ট প্লট। সেই সঙ্গে বানানো হয়েছে কয়েকটি দোকানঘরও। এখনো প্রতিদিন সমানভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে। রাতের বেলায় পাহাড় কাটার শব্দে আশপাশের বসতবাড়ির লোকজন ঘুমাতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, পাহাড় কাটার জন্য শ্রমিক ছাড়াও পাহারার নিয়োগ দিয়েছেন ১০ জনের বেশি ভাড়াটে সন্ত্রাসী। এসব সন্ত্রাসী নানা রকম অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওই প্লটগুলো পাহারা দেয়। ওই ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আশপাশের লোকজনকে নানা কারণে লাঞ্ছিত ও হুমকি দেয়। একই সঙ্গে পাহাড় কাটা ও প্লট তৈরি দেখভালের জন্য ভূমিদস্যু ইলিয়াছ সওদাগর দিনের অধিকাংশ সময় সেখানে অবস্থান করেন।

গত শুক্রবার সরেজমিন দেখা গেছে, কাটতে কাটতে এরই মধ্যে পাহাড়ের মধ্যখান পর্যন্ত কাটা হয়েছে। কাটা সমতল ভূমিতে ইটের দেয়াল দিয়ে খন্ড খন্ড করে প্লট তৈরি করা হয়েছে। পাহাড় কাটায় নিয়োজিত রয়েছে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক। পাহাড় কাটা দেখা না যাওয়ার জন্য সড়কের পাশের সীমানায় দেয়া হয়েছে উঁচু টিনের বেড়া। এতে করে বাইরে থেকে বোঝায় উপায় নেই ভেতরে পাহাড় কাটা হচ্ছে। অন্যদিকে পাহাড় কাটতে কাটতে বিটিসিএল টাওয়ারের কাছ পর্যন্ত গেছে। পাহাড় কাটার ফলে টাওয়ারের ২০ গজের বাইরে গভীর খাদ সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের আশঙ্কা।

পাহাড় কাটায় নিয়োজিত এক শ্রমিক জানিয়েছেন, পাহাড় কেটে তৈরি করা এসব প্লট বিক্রি করা হচ্ছে চড়া দামে। এরই মধ্যে কয়েকটি প্লট বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ইলিয়াছ সওদাগর তার গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়ার কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে ওই প্লটগুলো বিক্রি করেছেন। একটি প্লট ৫০ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, ‘আমরা ওই পাহাড় কাটার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শনের প্রতিবেদন চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ওই ঘটনাটি আমার জানা ছিল না।’

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহামদ বলেন, ‘কোনোভাবেই পাহাড় কাটা যাবে না। আমরা তা হতে দেব না। পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ মারাত্মক অপরাধ। আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist