কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া (কক্সবাজার)
বালুখালীর অভয়ারণ্য এখন রোহিঙ্গা আবাস
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোহাম্মদ সাইফুল (১৪) নামের এক রোহিঙ্গা কিশোর গতকাল শুক্রবার একটি বানর নিয়ে খেলছিল। এটি ঠিক খেলা ছিল না। গলায় দড়ি দেওয়া বানরকে টানাহ্যাঁচড়া করছিল মাত্র। আর ওই বানর চেষ্টা করছিল পালিয়ে বাঁচতে। এই দৃশ্য দেখে মজা করছিল ১০-১২ জন রোহিঙ্গা শিশু। এটি কোথায় পেয়েছো? এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ সাইফুল বলে, পাশের পাহাড়ে গাছ কাটতে গিয়ে সে বানরটি ধরেছে। সে আরো জানায়, লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা তার বন্ধু আলী হোসেনের কাছেও আরেকটি বানর আছে। ওই বানরটির একটি পা ভাঙা। কারণ বানরটি ধরার সময় গাছের শক্ত ডাল দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল।
উখিয়ার বালুখালী পাহাড়-জঙ্গল কিছুদিন আগেও পশু পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। হাতি, বানরসহ বিরল প্রজাতির প্রাণীর চলাফেরা ছিল সেখানে। আর সেখানে এখন গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের ঘন বসতি। এ কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীর আবাস। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে প্রাণীসমূহ। প্রকৃতির পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। খাদ্য সংকটে বন্য হাতিরা মাঝে মাঝেই হানা দিচ্ছে। হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত দেড় মাস আগে হাতির আক্রমণে মারা গেছেন এক বৃদ্ধ।
পরিবেশবিদরা বলেছেন, পশু-পাখির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে তাদের বিপদে ফেলা হয়েছে। রোহিঙ্গারা শুধু পশু-পাখির চলাচলের পথ বা আবাসস্থলই দখল করেনি, তারা গাছ কেটে নেড়া করছে পাহাড়। এতে দিক হারিয়ে ফেলেছে বনের পশু-পাখিরা। ঝুঁকির মুখে পড়েছে এলাকার জীববৈচিত্র্য।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের অত্যাচারে প্রাণ বাঁচাতে গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন অবস্থান করছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায়। তারা পশু-পাখির জায়গা দখল আর পাহাড় কেটে ফেলায় মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে প্রাণিকুল। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ওই এলাকায় এখন আর আগের মতো পশু-পাখি দেখা যায় না। আবার অনেক প্রাণী হাতের নাগালে চলে আসছে। খাবারের সন্ধানে ঘটছে হাতির আক্রমণ। হাতির আক্রমণে গত ৬ মাসে মারা গেছে ১৩ জন রোহিঙ্গা। আহত হয়েছে অন্তত ২২ জনের বেশি। এছাড়া ভাঙচুর করেছে ২ শতাধিক রোহিঙ্গা বসতি। পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পশু-পাখির অভয়ারণ্য টিকিয়ে রাখতে সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে ফেলা জরুরি। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির জানান, গত মাসের হিসাব অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের কারণে সাড়ে ৫ হাজার একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। তার মধ্যে সামাজিক বনায়ন রয়েছে ২ হাজার একর। বাকিগুলো প্রাকৃতিক বন। এভাবে চলতে থাকলে একসময় সম্পূর্ণ বনশূন্য হয়ে যাবে উখিয়া- টেকনাফ।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব জানান, রোহিঙ্গারা বনভূমি উজাড় করে ফেলায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আর এই পরিবেশ ফিরে পেতে চরম বেগ পেতে হবে কক্সবাজারকে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, কক্সবাজার এবং বান্দরবানে হাতি চলাচলের জন্য ১২ টি করিডোর রয়েছে। এসব করিডোরে বেশিরভাগ এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্প আর বিভিন্ন এনজিও সংস্থার অফিস স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে পশু-পাখির চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। দৈনিক ৪টি ফুটবল মাঠের সমান বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে।
"