প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
নিঃসঙ্গ বৃদ্ধদের সঙ্গ দেওয়ার এক অভিনব আয়োজন
নিঃসঙ্গ জীবন অনেকের কাছে একটি বড় ব্যাধির মতো। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এ সমস্যা অনেক প্রকট। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে নিঃসঙ্গতা মানুষকে চূড়ান্ত অবসাদের দিকে ঠেলে দেয়। মদ্যপান, ধূমপান ও মোটা হয়ে যাওয়ার মতোই নিঃসঙ্গতাও খারাপ বিষয়। খবর বিবিসি অনলাইনের। এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য ব্রিটেনের একটি শহরে অভিনব এক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নিঃসঙ্গ বৃদ্ধদের সঙ্গ দেওয়া এর মূল উদ্দেশ্য। ইংল্যান্ডের পশ্চিমে ফ্রোম নামের ছোট্ট এক শহরে এটি চালু হয়েছে। সু নামে এক বৃদ্ধা তার বাড়িতে একা থাকেন এবং তিনি ঘরের বাইরে যেতে পারেন না। এ শহরের একজন বৃদ্ধ বলেন, ‘আমাকে নানা ধরনের মানুষ দেখতে আসে। এটিই আমার দরকার। এটি আমাকে আত্মবিশ্বাস দেয়। আমি তখন ভাবতে পারি যে, পৃথিবীতে ভালো কিছু আছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনও বদলে যায়। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে চলে যায় দূরে। তখন মনে কষ্ট হয়।’ তার মতে, নিঃসঙ্গ জীবন কেমন সেটি কেউ ব্যাখ্যা করতে পারবে না, এই মনোকষ্ট কেবল বুড়াবুড়িরাই বুঝেন।
একা থাকতে থাকতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল বলেও জানান তিনি। নিঃসঙ্গ মানুষকে সঙ্গ
দিতে স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসক এ কাজ শুরু করেছেন। সেখানে মানুষের নিঃসঙ্গতা যেভাবে বেড়ে যাচ্ছিল তাতে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
হেলেন কিংস্টন নামে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আপনি যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং কারো সঙ্গে আপনার যোগাযোগ না থাকে, তখন আপনি নিজেকেও ঠিক রাখতে পারবেন না।’
২০১৩ সালে চিকিৎসক হেলেন চিন্তা করেন কীভাবে বৃদ্ধ মানুষদের নিঃসঙ্গতা দূর করা যায়। নিঃসঙ্গ মানুষের চাহিদা নিরূপণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হতো। হেলথ সেন্টারে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধদের জন্য একটি কক্ষ রাখা হয়েছে। সেখানে সবাইকে একত্রিত করে প্রতিদিন নানা ধরনের কর্মকা- করানো হয়। এতে তাদের সময় কাটে এবং পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে। শুধু তাই নয়, চিকিৎসক হেলেন বলেন, তারা একটি কমিউনিটি গড়ে তুলেছেন, যেখানে পাঁচ শতাধিক মানুষ আছে, যারা বৃদ্ধদের সময় দেন।
প্রত্যেকে প্রতি বছর ২০ জন বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলেন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১০ হাজার বৃদ্ধকে পুরো বছরে সময় দেওয়া যায়। বৃদ্ধা সু বলছেন, ‘এক দিন আমাকে ফোন করে বলা হলো একজন আমাকে দেখতে আসবেন। আমার যে কী আনন্দ হয়েছিল বলে বোঝাতে পারব না।’
এরপর থেকে কেউ না কেউ নিয়মিত বৃদ্ধা সুর বাসায় আসতে থাকেন এবং তার খোঁজখবর নেন। তখন থেকে সু শারীরিকভাবেও সুস্থ হয়ে ওঠেন।
"