সিলেট প্রতিনিধি
ভূমিখেকোর ছোবল : ধ্বংস হচ্ছে লাল শাপলার চার বিল
সিলেটের জৈন্তাপুরে চোখ জুড়ানো লাল শাপলার রাজ্য। এখানকার চারটি বিলে জাতীয় এই ফুলের প্রাকৃতিক সমারোহ। এতে কুদৃষ্টি পড়েছে অসাধু মানুষের। এই চক্রের ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি। চোরাকারবারি, ভূমিখেকো, মৎস্য খেকোদের কবলে পড়ে বিলের স্বাভাবিক পরিবেশ ধ্বংসের পথে। ফলে এই স্থানের প্রতি আকর্ষণ হারাচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। স্থানীয়দের দাবি, ভূমিখেকো, মৎস্যখেকো এবং চোরাকারবারিদের ঠেকাতে পারলে বিল চারটি হারানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরে পাবে। চারটি বিলে প্রায় ৯০০ একর জায়গা জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে ফুটে লাল শাপলা।
প্রতি বছর কাকডাকা ভোর হতে সারা দিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ছুটে আসে হাজার হাজার পর্যটক। অতি সম্প্রতি এই বিলের পরিচিতি বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এই বিলগুলোর লাল শাপলা জৈন্তিয়া তথা সিলেটের পর্যটন উন্নয়নে এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এদিকে, সরকার বিলগুলো লিজ প্রদান করায় এক শ্রেণির ভূমিখেকো, মৎস্যখেকো চক্র এবং চোরাকারবারি চক্রের কবলে পড়ে বিলগুলো এর সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।
পর্যটন উন্নয়নের জন্য চারটি বিলকে অভয়ারণ্য ঘোষণা এবং লিজ প্রথা বাতিলের জন্য প্রশাসনের বরাবরে লিখিত স্মারকলিপি দিয়েছে জৈন্তিয়া পর্যটন উন্নয়ন ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ কমিটি। অভিলম্বে এই বিলগুলোর ইজারা বাতিল এবং অভয়ারণ্য ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরিন করিমের কাছে লিখিত স্মারকলিপি ও দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ডিবির হাওর এলাকার লাল শাপলার রাজ্যের চোরাকারবারি, ভূমিখেকো, মৎস্য খেকোদের কবলে পড়ে ‘ইয়াম বিল, হরফকাটা বিল, কেন্দ্রী বিল ও ডিবি বিল।’ এই চারটি বিলের ৯০০ একর জায়গা জুড়ে প্রতি বছর প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলায় ভরে উঠে। এ কারণে এলাকাটি দেশ-বিদেশে লাল শাপলার রাজ্যে হিসাবে পরিচিতি।
এদিকে, বেসরকারি কয়েকটি টিভি চ্যানেল, জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের দূর-দূরান্ত হতে এখন শ শ পর্যটকের ঢল নামে বিলগুলোতে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদুর রহমানের আমলে ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ করার নামে এলাকাটি চিহ্নিত করা হলে ভূমিখেকোদের তৎপরতা বেড়ে যায়। এরই প্রতিবাদে তৎকালীন স্থানীয় এলাকাবাসীসহ পরিবেশবাদীরা গ্রাম ও বিল রক্ষার জন্য সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধনসহ আন্দোলনে নামলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাবনাটি বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। প্রকল্প বাতিল করা হলেও প্রভাবশালী এক নেতার ইশারায় ভূমিখেকো চক্র সিলেটের ডিবি হাওরের লাল শাপলার চারটি বিল দখল-বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। পর্যটক বিমুখ করতে এবং নিজেদের ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে বিলগুলোর সৌন্দর্য ধ্বংসের জন্য তাদের তৎপরতা চলমান আছে।
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিলগুলোতে যাতে লাল শাপলা তার সৌন্দর্য বিস্তার করতে না পারে তাই কৌশল অবলম্বন করে তিনটি চক্র শাপলা বিলে মহিষ নামিয়ে লাল শাপলার গাছ ধ্বংস করছে। পর্যকটদের আনাগোনার কারণে চোরাকারবারিরা তাদের অপতৎরতা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শাপলা ধ্বংসে তৎপর রয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন এই চার বিলের ইজারা বাতিলের দাবি করায় মৎস্য আহরণকারীরা বিল শুকিয়ে লাল শাপলা ধ্বংস করছে। অপরদিকে, মৎস্যজীবীদের নামে বিলগুলো লিজ গ্রহণ করে চোরাকারবারিরা তাদের বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, চোরাকারবারিরা প্রতিদিন সন্ধ্যা হতে না হতে স্থানীয় ডিবির হাওর রাস্তা ব্যবহার করে ভারত হতে চোরাই মালামাল আনে। তারা আরো জানান বিলগুলো সীমান্তবর্তী হওয়ার ফলে চোরাকারবারিরা কৌশলে বিল লিজ গ্রহণ করে।
বিল পাহারার নামে প্রতিদিন সীমান্তের অপার থেকে মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের অপতৎপরতার কারণে সৌন্দর্য পিপাসুরা প্রতিনিয়ত লাল শাপলার বিল হতে ফিরে যাচ্ছে। তারা ভূমিখেকো, মৎস্যখেকো এবং চোরাকারবারিদের বন্ধ করলে ডিবির হাওর বলোকার চারটি বিল (ইয়াম বিল, হরফকাটা বিল, কেন্দ্রী বিল ও ডিবি বিল) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরে পাবে বলে আশা করেন।
পর্যটন উন্নয়ন ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ কমিটির প্রতিনিধি জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ বাবর, ইমরান আহমদ মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরিন করিমের কাছে পর্যটন উন্নয়নের জন্য এই চার বিলকে অভয়ারণ্য ঘোষণা এবং লিজপ্রথা বাতিলের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরিন করিম জানান চারটি বিলে প্রায় ৯০০ একর জায়গা জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে ফুটে উঠে লাল শাপলা। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ছুটে আসে হাজার হাজার পর্যটক। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করতে আমার কাছে বিভিন্ন সংগঠন স্মারকলিপি দিয়েছে আমি দরকারি ব্যবস্থা নেব, বিষয়টি সরকারকে জানাব।
"