লালমনিরহাট প্রতিনিধি
যৌতুক দাবিতে স্ত্রী নির্যাতন
মাথা ন্যাড়া : মামলা স্বামীসহ আটক ২
শ্বশুরের মৃত্যু পর বসতভিটা, জমির ভাগ অথবা মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবি করেছিলেন হাতিবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদীবাড়ি এলাকার মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে (স্বামী) বাবলু মিয়া। কিন্তু টাকা আদায় করতে না পেরে স্ত্রী শাহানারা বেগমকে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে সে। শুধু তাই নয়, ওই গৃহবধূকে বেধড়ক মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করে ঘরে বেঁধে রাখেন। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন বাবলু মিয়ার বড় ভাই ও দুই বোন। বর্তমানে ওই গৃহবধূ লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত বুধবার সকালে ১০টায় উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদীবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই গৃহবধূ তার স্বামীসহ চারজনের নামে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ দুজনকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন স্বামী বাবলু মিয়া ও তার বড় বোন মহুরন নেছা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের মৃত ঝুলুর রহমানে ছোট মেয়ে শাহানারা বেগমের সঙ্গে বাবলু মিয়ার ১০ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের সময়ে দাবিকৃত ২ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়। এছাড়াও উপঢৌকন বাবদ আরো ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরই মধ্যে তাদের সংসারে চার সন্তানের জন্ম হয়েছে। কিছু দিন আগে ঝুলুুর রহমানের মৃত্যু হলে বাবলু মিয়া আরো ১ লাখ টাকা দাবি করে। তা নাহলে তার শ্বশুরের বসতভিটার ১০ শতাংশ জমির ভাগ বিক্রি করে টাকা নিয়ে আসার জন্য তার স্ত্রীকে চাপ দেয়। স্ত্রী শাহানারা বেগম এতে রাজি না হলে তার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার সকাল ১০টার সময় আসামি বাবলু মিয়া (৩৫), তার বড় ভাই আবদুল গফুর (৪০), স্বামী পরিত্যক্ত দুই বোন মহুরন নেছা (৩৭) ও আমেনা বেগম (৩০) মিলে যৌতুকের টাকা দাবি করে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে লাঠি দিয়ে শাহানারা বেগমকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করে। এতেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। এরপর তার স্বামীসহ সবাই মিলে শাহানারা বেগমের হাত-পা বেঁধে তার মাথা ন্যাড়া করে দেন। পরে ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখেন।
ওইদিন বিকেলে বাবলু মিয়া বাজারে গেলে এই সুযোগে সন্ধ্যায় শাহানারা বেগম ঘরের বেড়ার কেটে পালিয়ে এসে হাতিবান্ধা হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ বিষয়ে শাহানারা বেগম বাদী হয়ে তার স্বামীসহ ওই চারজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাবলু মিয়া ও তার বড় বোন মহুরন নেছাকে গ্রেফতার করে।
সরেজমিন একদল সাংবাদিক হাসপাতালে গিয়ে শাহানারা বেগমকে দেখে আসেন। তার ন্যাড়া মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান তারা।
এ বিষয়ে কথা হলে সিন্দুর্না ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, বাবলুর পরিবারের সব সদস্য বদমেজাজের লোক। তারা এলাকার কাউকেই মানেন না। আর এ কারণে তাদের পরিবারের সঙ্গে কেউ তেমন একটা সম্পর্ক রাখে না।
"