আদালত প্রতিবেদক
যুদ্ধাপরাধ
ফুলবাড়িয়ার রিয়াজ-ওয়াজের রায় যেকোনো দিন
লাখাইয়ের দুজনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও ওয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় জানা যাবে যেকোনো দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল বুধবার মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে। এছাড়া একই মামলায় হবিগঞ্জের লাখাইয়ের শফি উদ্দিন মাওলানা, মো. তাজুল ইসলাম ওরফে ফোকন এবং জাহেদ মিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গতকাল বুধবার প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক।
ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সানাউল হক জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, আটক, নির্যাতন এবং অপহরণসহ পাঁচ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার বিভিন্ন স্থানে আসামিরা এসব অপরাধ সংঘটন করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছ তদন্ত প্রতিবেদনে।
তিনি বলেন, আসামিরা তিনজন ছিলেন তালিকাভুক্ত রাজাকার। তাদের মধ্যে শফি উদ্দিন মাওলানা পূর্ব পাকিস্তান নেজামে ইসলামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ছিলেন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে লাখাই থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি লাখাই থানা শান্তি কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। তার বাড়িতেই ছিল রাজাকার কার্যালয় ও টর্চার সেল। তদন্ত সংস্থার এই সমন্বয়ক জানান, তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এমএলএ মোস্তফা আলীর বাড়িসহ ১০-১২টি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং তিন মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস মিয়া, আবদুল জব্বারকে অপহরণের পর নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
সানাউল হক আরো জানান, শফি উদ্দিন মাওলানা বর্তমানে জামায়াতে ইসলামির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তাজুল এবং জাহেদ বিএনপির সমর্থক। আসামিদের মধ্যে শফি উদ্দিন ছাড়া বাকি দুজন কারাগারে রয়েছেন।
ফুলবাড়িয়ার রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও ওয়াজ উদ্দিনের মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ঋষিকেষ সাহা। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। আসামিদের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন কারাগারে এবং ওয়াজ উদ্দিন পলাতক। এ মামলায় প্রাথমিকভাবে তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলেও অভিযোগ গঠনের আগে গ্রেফতার আসামি আমজাদ আলী কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা গেলে তার নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকউশনের তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একাত্তরে রিয়াজ ছিলেন আলবদর সদস্য, আর ওয়াজ ছিলেন রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা দুজনই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে দেওয়া অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২২ আগস্ট থেকে ২১ নভেম্বরের মধ্যে ফুলবাড়িয়া উপজেলার বেবিট্যাক্সি স্ট্যান্ড, রাঙ্গামাটিয়া ঈদগাহ সংলগ্ন বানা নদী, দিব্যানন্দ ফাজিল মাদরাসা, ফুলবাড়িয়া ঋষিপাড়া, আছিম বাজার ও ভালুকজান গ্রামে আসামিরা মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ফুলবাড়িয়ার দুই আসামির বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১০ সালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর এটি হবে ৩২তম রায়।
"