নিজস্ব প্রতিবেদক
কারাবন্দিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়তা করুন : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংশোধনের মাধ্যমে কারাবন্দিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কারা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারা সপ্তাহ-২০১৮ উপলক্ষে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পৃথিবীতে কেউ অপরাধী হিসেবে জন্মায় না। বিভিন্ন অনাকাক্সিক্ষত ও প্রতিকূল পরিবেশ তাদের অপরাধী বানায়। সেই কারণে কারা কর্তৃপক্ষকে তাদের প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে; যাতে তাদের মধ্যে মূল্যবোধ জাগ্রত হয় ও পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে।
কারা কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ সংশোধিত হওয়ার ও উৎসাহমূলক কার্যক্রম নিতে পারে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সুস্পষ্টভাবে বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ কারাবন্দিদের বন্দিজীবন থেকে ফেরার পর সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরে নতুন জীবন এবং রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের কাজে অবদান রাখায় সহায়ক হবে।
এবারের ‘কারা সপ্তাহ-২০১৮-এর মূল প্রতিপাদ্য ‘সংশোধন ও প্রশিক্ষণ, কারাবন্দিদের করবে পুনর্বাসন।’ আবদুল হামিদ এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রয়াত জাতীয় চার নেতার কারাজীবনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষকে এ কথা মনে রাখতে হবে যে, কেবল অপরাধীই নয়, অনেক রাজনীতিক নেতাও বিভিন্ন সময় কারা জীবনযাপন করেছেন।’
কারাবাসীদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূিচ ও সুবিধাদির উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, তাদের দক্ষ মানবশক্তিতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে এ ধরনের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হবে।
কারাগারে বন্দিদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং কিছু নতুন সুযোগ-সুবিধা চালু প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, বন্দিরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করায় তারা দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হয়ে থাকেন। বন্দিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোন বুথ চালুর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এ জাতীয় উদ্যোগ বন্দিদের মন ভালো রাখতে সহায়তা করবে।
কারাগারে হস্তশিল্প ও বেকারি স্থাপনের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এটি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। কারাগার শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি থেকে লাভের শতকরা ৫০ ভাগ পান বন্দিরা। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও আইজিপি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।
দুর্নীতি ও অসত্যের সঙ্গে আপস নয় : শিক্ষার্থীদের প্রতি রাষ্ট্রপতি
এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গাজীপুরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং ন্যায়বিচার, অসত্য ও দুর্নীতির সঙ্গে আপস না করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা কখনো কোনো অন্যায় ও অবিচারের কাছে মাথা নত করো না। তোমরা সব সময় সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে যথাযথ সেবা প্রদান করে তোমাদের অর্জিত সার্টিফিকেটের মর্যাদা সমুন্নত রাখার চেষ্টা করবে।’ ডুয়েটের আচার্য নতুন ¯œাতকদের মুক্তচিন্তার সংগ্রাম ও স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করা এবং সমাজ তথা দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য সর্বদা চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে গুরুত্ব প্রদান এবং বিশ্বায়ন প্রতিযোগিতার কারণে বিশ্বমানের জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দেশের অব্যাহত উন্নতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
‘মনে রাখতে হবে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আমাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে’ শিক্ষার্থীদের তিনি এই পরামর্শ দিয়ে বলেন, তরুণ প্রকৌশলীলা তাদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা ও অর্জিত জ্ঞান এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারে। বর্তমান সরকার গবেষণা কর্মসহ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সব একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণে গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ গবেষণার ফলাফল ও নতুন উদ্ভাবন সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
আর্থসামাজিক ক্ষেত্রের সব দিকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের অভিভাবকের মতো আরো স্নেœহশীল হতে হবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান সমাবর্তন বক্তা ছিলেন। ডুয়েট উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিনও এতে বক্তৃতা করেন।
"