রংপুর প্রতিনিধি
বালুচরে আশার প্রদীপ জ্বেলেছে তুলা চাষ
রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা এলাকায় প্রায় ৬০ বর্গকিলোমিটার তিস্তার বিস্তীর্ণ চরের মাটি বালু দোআঁশ। ধুসর বালু মাটিতে প্রথাগত ফসল ভালো না হওয়ায় চাষিরা এক সময় হতাশায় ছিল। কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যের মাটি তুলা চাষের উপযোগী। তাছাড়া তুলা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। এরই মধ্যে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শে সেখানে তুলা চাষ করে সফল হয়েছেন চাষিরা। আশাহীন বালুচরে আশা প্রদীপ নিয়ে এসেছে এই তুলাচাষ।
তিস্তার চরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কার্পাস তুলা চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে তুলা চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তুলা চাষ করে অনেক চাষি স্বাবলম্বী হয়েছেন। দিন দিন তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।
সরেজমিনে হারাগাছের ধুমগাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের পাশে জেগে উঠেছে তিস্তার চর। জেগে উঠা এই চরের মাটিও বালু দোআঁশ। তুলা চাষের উপযোগী এই মাটিতে কৃষকরা কার্পাস তুলা (আপল্যান্ড কটন) চাষ করে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শে সেখানে তুলা চাষ করেছেন চাষিরা।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড ২০১৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ২-১জন উৎসাহী চাষিকে দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে তুলা চাষের ব্যবস্থা করে। প্রথম বছরেই চাষিরা তুলা চাষে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় পরের বছর ২০১৭ সালে ওই এলাকার অনেক চাষি তুলা চাষে এগিয়ে আসেন। চাষি নুরুল আমিন দাজু, বাদশা মিয়া জানান তারা দুজনে চলতি মৌসুমে ২০ একর জমিতে রুপালি চায়না, ডিএমথ্রি, লালতীর সিভি-১২ জাতের কার্পাস তুলা চাষ করেছেন। গত মৌসুমে তুলা চাষ করে লাভের মুখ দেখায় এবার তারা দ্বিগুণ জমিতে তুলা চাষ করেন।
ধুমগাড়া গ্রামের তুলাচাষি খোরশেদ আলী জানান, হাইব্রিড জাতের তুলা একরে ৫০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়। প্রতিমণ তুলা ২৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। উৎপাদন খরচ হয় প্রায় এক হাজার ২০০ টাকা। জুলাই আগস্ট মাসে রোপণ করা তুলা জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে উত্তোলন করা হয়।
এ তুলা দিয়ে উন্নতমানের সুতা ও কাপড় তৈরি হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। তাদের উৎপাদিত তুলা রংপুর তুলা উন্নয়ন বোর্ডও ক্রয় করে থাকে। ফলে তুলা বিক্রয় করতে বেগ পেতে হয় না। তুলা উন্নয়ন বোর্ড রংপুর জোনের কটন ইউনিট অফিসার আ. মান্নান সরকার জানান চলতি মৌসুমে হারাগাছ ধুমগাড়া অঞ্চলে ১৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কার্পাস তুলা (আপল্যান্ড কটন) চাষ করা হয়েছে। কৃষকদের ঋণের মাধ্যেমে বীজ, সার সরবরাহসহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ জন চাষি এ এলাকায় তুলা চাষ করেছেন। তুলা চাষে তেমন খরচ হয় না। বীজ সার ছাড়া ৫-৬ বার সেচ দিয়ে তুলা ঘরে তোলা যায়। তুলা চাষে বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
কাউনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানান, কাউনিয়ার চরাঞ্চলের মাটি তুলা চাষের জন্য উপযোগী। এলাকার প্রান্তিক চাষিরা কৃষি বিভাগের অন্যান্য ফসলের মতো তুলা চাষে প্রণোদনা দাবি করেছে। তুলা চাষিদের যেকোনো ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. সারওয়ারুল হক জানান, কয়েক বছর থেকে তিস্তার চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় তুলা চাষ করে চাষিরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কৃষকের দিন দিন তুলা চাষ আগ্রহ বাড়ছে।
"