আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১০ মার্চ, ২০১৮

প্রথম কলাম

এবার চীনে বাঁদরের ক্লোন

ছোট্ট দুটি বাঁদরছানার জন্ম হয়েছে চীনে। আর তাতেই সাড়া পড়ে গেছে বিশ্বজুড়ে। কারণ এরা কিন্তু নেহাতই অতি সাধারণ বাঁদর নয়। দীর্ঘদিনের চিন্তা-ভাবনা, কাটাছেঁড়া, তর্ক-বিতর্কের বেড়াজাল পেরিয়ে বিজ্ঞানীদেরই হাত ধরে জন্ম হয়েছে এই বাঁদর শিশুদের। এরা দেখতেও হুবহু এক। চোখ, কান, নাক, চালচলন- কোথাও এতটুকু ফারাক নেই। ঠিক যেন একটি, অন্যটির ‘ফটো কপি’। আদর করে তাদের নাম রাখা হয়েছে ‘ঝং ঝং’ এবং ‘হুয়া হুয়া’। এরা কি যমজ? উত্তর হবে- হ্যাঁ। তবে এরা একে অপরের ‘অনুরূপ প্রতিলিপি’। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘ক্লোন’। এই আবিষ্কার মানবদেহের দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ে নতুন বার্তা বয়ে আনবে বলে উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানিরা।

চীনের সাংহাই প্রদেশের ‘চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট’-এর নিউরোসায়েন্স বিভাগের একদল জীববিজ্ঞানীর দীর্ঘ দিনের গবেষণার ফসল এই দুটি প্রাণী। ‘ক্লোনিং’ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে এদের। একই ধরনের জিনগত বৈশিষ্ট্যের দুটি প্রাণী। যাদের দেহকোষগুলোও অবিকল একই রকমের।

এর আগে অন্তত ২০টি স্তন্যপায়ী প্রাণীর ‘ক্লোন’ করা হয়েছে। কিন্তু তাও এই গবেষণাকে যুগান্তকারী বলছেন বিজ্ঞানীরা, তার মূল কারণ হলো, এর আগে ভেড়া, কুকুর, ইঁদুর, গিনিপিগ জাতীয় প্রাণীর ‘ক্লোন’ তৈরি করা হয়েছিল। এই প্রথম ‘নন-হিউম্যান প্রাইমেট’ বা মানুষের ঠিক আগের পূর্বসূরির ওপর সফলভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। দিল্লির ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ (আইআইটি)-র ‘টিসু ইঞ্জিনিয়ার’ অধ্যাপক সৌরভ ঘোষ বলেছেন, ‘এই গবেষণা পরবর্তী কালে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ে এবং জীববিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিষ্কারের দরজা খুলে দেবে।’

‘ক্লোনিং’-এর সূচনা হয় ১৯০০ সালে জার্মান এমব্রিয়োলজিস্ট হানস স্পেম্যানের হাত ধরে। তিনি ক্লোনিং পদ্ধতিতে একটি স্যালামান্ডারের (উভচর প্রাণী) ভ্রƒণ তৈরি করেন। ১৯৫২ সালে আমেরিকার বিজ্ঞানী রবার্ট ব্রিগস এবং থোমাস জে কিং একটি ব্যাঙের ক্লোন তৈরি করেন। ১৯৫৮ ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী জন বার্ট্রান্ড গর্ডনও ব্যাঙের ওপর পরীক্ষা চালান। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নিয়ে ক্লোনিং গবেষণার কাজ শুরু হয় ১৯৮০ সাল থেকে। ১৯৯৬ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বায়োটেকনোলজি কোম্পানি প্রথম ভেড়ার ক্লোন তৈরি করে। আমেরিকান গায়িকা ডলি পার্টনের নামে যার নাম দেওযা হয় ‘ডলি’। ২৭৭ বারের চেষ্টায় জন্ম হয় ডলির।

১৯৯৮ সালে উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস থমসন ক্লোনিংয়ের সাহায্যে মানব ভ্রƒণের কোষ তৈরি করেন। তবে সেই গবেষণা সফলতা পায়নি। সেই সময় মানব ক্লোনিং নিয়ে বিশ্ব জুড়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। মানব ক্লোনিং উচিত না অনুচিত সেই নিয়ে তাবৎ বিজ্ঞানীমহলেও চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক।

২০০৭ সালে আমেরিকার ‘ওরিগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী শ্যুখরাট মিতালিপভ প্রথম ‘সোমাটিক সেল নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার’ পদ্ধতিতে ‘নন-হিউম্যান প্রাইমেট’ ম্যাকাকা বাঁদর নিয়ে ‘ক্লোনিং’ শুরু করেন। তবে সে ক্ষেত্রেও প্রাথমিক পর্যায়ের ভ্রƒণ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এ বার তাতে সার্বিক সাফল্য পেলেন চীনের বিজ্ঞানীরা।

এই আবিষ্কার একটি যুগান্তকারী । কারণ বাঁদর যেহেতু মানুষের পূর্বসূরি, তাই তাদের ওপর কোনো ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল যদি সফল হয়, তা হলে সেটা মানবদেহে কিভাবে কাজ করতে পারে, তার একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান মৈনাক সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘একই জিনগত বৈশিষ্ট্যের যদি অসংখ্য এই রকম ক্লোন তৈরি করা যায়, তাহলে তাদের ওপরই নানা ওষুধের মান পরীক্ষা করা যাবে। মানুষের ওপর প্রয়োগের আগে বাঁদরদের ওপর পরীক্ষা করেই বোঝা যাবে কোনো ওষুধের কার্যকারিতা কী, প্রয়োগের ফলে তা দেহে কী কী পরিবর্তন আনছে এবং ভবিষ্যতে কোন দুরারোগ্য ব্যধির চিকিৎসার কাজে প্রয়োগ করা যেতে পারে।’

বাঁদরের পর কি এবার মানুষের পালা?

‘মানব ক্লোনিং’ নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। বিজ্ঞানীদের দাবি বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে মানব ক্লোনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পক্রিয়া, এই গবেষণা সফল হলে প্রজননগত বহুরকম ত্রুটি দূর করা সম্ভব হবে। কিন্তু, গবেষকদের এই মতে বাদসাধে বিভিন্ন দেশের বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। নৈতিকতার খাতিরে অনেক বিজ্ঞানীদের মধ্যেও দেখা দেয় সংশয়। মানব ক্লোনিং নিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও তখন দ্বিধাবিভক্ত। এক দলের দাবি, এই পক্রিয়া খোদার ওপর খোদকারি ছাড়া আর কিছুই নয়। অনেকে আবার প্রশ্ন তোলেন, বায়োমেডিক্যাল রিসার্চের জন্য এতদিন ইঁদুর, গিনিপিগ, খরগোশ জাতীয় প্রাণীর ওপর নানা অত্যাচার চলত। বৈজ্ঞানিক গবেষণার স্বার্থে একাধারে চলত প্রাণী হত্যা। কিন্তু, ক্লোনিংয়ের গবেষণা সফল হলে এই প্রাণী নিধনে ইতি পড়বে। সূত্র- আনন্দবাজার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist