রাজশাহী ব্যুরো
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
রুয়েট ছাত্রলীগ কমিটির কার্যক্রম স্থগিত
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয় (রুয়েট) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর রুয়েট ছাত্রলীগ কমিটির সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। রাতেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক আদেশে রুয়েট ছাত্রলীগ কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয় বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ। তিনি জানান, রুয়েট ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা ছাড়াও সভাপতি নাঈম রহমান নিবির ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মাহফুজুর রহমান তপুকে শোকজ করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কেন সংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে নাÑ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের কারণ জানতে বলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব ঘটনার জের ধরে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় তিনটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সংঘর্ষে আটজন আহত হয়েছেন। রুয়েটের শহীদ আবদুল হামিদ হলে এ সংঘর্ষের ঘটনায় আহত সাতজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলাম শফি জানান, রুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় আটজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে সাতজনকে ভর্তি করা হয়েছে। আর একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে ইমরান, রাজন, আশিককে ৮ নং ওয়ার্ডে এবং অর্নব, আবির, রাজ ও মাহাতিরকে ৩১ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আর মিতুনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান এসআই শফি।
মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজিব জানান, পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে রাত ১২টার দিকে মহনগর ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দ রুয়েট ক্যাম্পাসে যায়। পরে তারা পুলিশের সহযোগিতায় পরিস্থিতি শান্ত করে হামিদ হল থেকে আহত আটক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। আহত সবাই রুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মাহফুজুর রহমান তপুর সমর্থক। তবে কী নিয়ে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি এই ছাত্রলীগ নেতা।
মতিহার থানার ওসি শাহাদত হোসেন খান বলেন, রুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম রহমান নিবির ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মাহফুজুর রহমান তপুর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সভাপতির সমর্থক এক সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতাকে সম্মান না জানানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত।
ওসি শাহাদত বলেন, রাত সোয়া ১১টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এরপর সভাপতির সমর্থকরা জড়ো হয়ে হলের গেট বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের পিটিয়ে জখম করে। রাত সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ ও নগর ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে দুই গ্রুপ ক্যাম্পাসে শোডাউন দেয়। রাত ১০টায় দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সভাপতির অনুসারী বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী রুয়েটের হামিদ হলে যায়। খবর পেয়ে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীরাও অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুতি নেয়। হলে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরেই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় হলে থাকা আবাসিক শিক্ষার্থীরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্রায় দেড় ঘন্টা চলা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটনানো হয়।
"