বিবিসি

  ১০ মার্চ, ২০১৮

‘মহিলা মানে সেজে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা’

দেশে বেসরকারি খাতে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ থাকলেও কোম্পানির শীর্ষ পদে নারীদের হার খুবই নগণ্য। বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালক পদেও যেসব নারী আসছেন তাদের বেশির ভাগই মনোনীত হন পরিবার থেকে। আর যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে হাতেগোনা দু-একজন যারা সফল হয়েছেন তাদেরও নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। হুমায়রা আজম ১৯৯১ সালে একটি বিদেশি ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। এখন বাংলাদেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বাংলাদেশে করপোরেট জগতে শীর্ষ পদে যে গুটিকয়েক নারী সফল হয়েছেন হুমায়রা আজম তাদের অন্যতম। দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে সুনামের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি অর্গানাইজেশনে এসে যেটা দেখলাম এখানে পেশাদারিত্বের একটা মারাত্মক অভাব আছে। এখানে মহিলাদের সংজ্ঞা হচ্ছে তারা সুন্দর পরিপাটি হয়ে পার্টির মতোন সেজে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন বোর্ডের জন্য অথবা সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের জন্য। সো মহিলাদেরকে যে সম্মান দেওয়া দরকার তার ডেফিনিটলি সেটার একটা ভয়াবহ ঘাটতি আছে বাংলাদেশে।’

হুমায়রা আজম অনেকটা হতাশার সুরেই করপোরেট সেক্টরে নারীদের চিত্র তুলে ধরেন। তার মতে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারীরা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় দেশীয় কোম্পানিতে শীর্ষ পদে সুযোগ কম পায়। ‘মাল্টিন্যাশনালে এত প্রফিট বানায়, তাদের করর্ােরেট গভর্ন্যান্স এত প্রপার, স্ট্র্যাটেজি ঠিক আছে, তারা যদি মহিলাদের আনতে পারেন তার মানে ক্যাপাবিলিটি দেখে এনেছেন। আমাদের পুরো চিন্তাধারায় আসলেই একটা মেজর পরিবর্তন আনা দরকার। কারণ

আমাদের বাংলাদেশি কোম্পানিতে কিন্তু মহিলাদের আমরা ওই সম্মান দিচ্ছি না বা আনছি না।’

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত শীর্ষ কোম্পানির প্রোফাইল খুঁজলে খুব কম প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে প্রধান নির্বাহী বা চেয়ারম্যান হিসেবে নারীদের দেখা যায়। সেখানে পরিচালক পদেও নারীর সংখ্যা অনেক কম। বেসরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে করপোরেট সেক্টরে পরিচালক পদে নারী আছে ১৭ শতাংশ। তবে তাদের বেশির ভাগই এসেছে পরিবার থেকে।

হুমায়রা আজম বলেন, ‘আপনি ওপরের লেভেলে কয়টা মহিলাকে দেখতে পেয়েছেন? নাই। তার মানেটাকি? তার মানে বৈষম্যটা কঠিনভাবে আছে। একটা মহিলা যখন একটা ভালো জায়গায় আসেন ডেফিনিটলি একটা পুরুষের তুলনায় তাকে দশ গুণ, বিশ গুণ বেশি পরিশ্রম করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়।’

গবেষকরা দেখছেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানে নারীর হয়রানি, মাতৃত্ব, পদোন্নতি, পারিবারিক-সামাজিক বাধাসহ নানা চ্যালেঞ্জ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের শিক্ষক তানিয়া হক বলেন, ‘এন্ট্রি লেভেলে নারীদের লেবার মার্কেটে আসার জায়গাটা অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে। এই দেরিতে শুরুর হওয়ার কারণে উচ্চ পদে যাওয়ার জন্য নারীদের আরো সময় দরকার। লেবার মার্কেটটা বাংলাদেশ মেইল ব্রেড আর্নার রোল মডেলে চলছে। সেখানে যে স্ট্রাকচারাল চেইঞ্জগুলো, সেগুলো আমরা এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি।’

বিশ্বে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় কোন দেশের কী অবস্থান; সেটি প্রকাশ করা হয় গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তৈরি ২০১৭ সালের ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো। প্রথম ৫০টি দেশের তালিকায়ও রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু নারীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ এবং সুযোগের মানদন্ডে বেশ পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist