দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় দখলকৃত ফ্রান্স থেকে কোড করা গোপন বার্তা পাঠাতেন হেলেন টেইলর থম্পসন। সেখানে ছোটখাটো কোনো ভুল হলেই হয়তো সেটা কারো জীবনকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারত। যুদ্ধের এতকাল পরেও সে সময়ের সব কথাই এখনো গোপনে নিজের মধ্যে বয়ে বেড়াচ্ছেন একসময়ের গুপ্তচর ৯৩ বছরের এই ব্রিটিশ নারী। একবারই কমেন্ট করেছিলাম একটি বাংলা পত্রিকার নিউজে, তারপর গালাগালির বন্যা!

‘আপনি যা দেখেছেন বা যা করেছেন, সেটা নিয়ে যদি কখনো কারো কাছে কিছু বলেন, সেটা দেশদ্রোহিতা বলে বিবেচিত হবে, হয়তো আপনাকে তার জীবন দিয়েই তার মূল্য দিতে হবে।’-বলছেন মিস টেইলর। ১৯ বছর বয়সে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে তিনি স্বাক্ষর করেন। তখনকার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ‘গোপন আর্মি’ বলে পরিচিত বাহিনীর এক সদস্য ছিলেন মিস টেইলর।

সত্যি কথা বলতে কী, আমি তাদের সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমি তাদের পোশাকও পছন্দ করতাম না। আমি জানতাম না, ফ্রান্সে তারা কী ধরনের স্যাবোটাজের কাজকর্ম করছে। স্পেশাল অপারেশন এক্সিকিউটিভ নামের একটি গোপন বাহিনী তৈরি করেছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, যাদের কাজ ছিল গোপনে জার্মান বাহিনীর বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করা আর ধ্বংসাত্মক অভিযান চালানো।

তিনি বলছেন, ‘আমার কাজ ঠিক বিপজ্জনক ছিল না, কিন্তু আমাকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হতো। কারণ আমার সামান্য একটি ভুলে কারো জীবন বিপদে পড়তে পারত।’

হেলেন চান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নারীরা যে ভূমিকা পালন করেছিলেন, তা যেন স্মরণীয় করে রাখা হয়। যারা সেখানে গেছেন, তাদের অনেককে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, অনেকে আর কখনো ফিরে আসেননি। জার্মান দখলকৃত ফ্রান্স গুপ্তচরদের কাছে গোপন বার্তা পাঠাতেন হেলেন। এদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন ছিলেন নারী, যারা শত্রু এলাকায় গোপনে কাজ করতেন।

তিনি বলছেন, ‘তারা চাইতেন, আমরা জার্মান লাইন অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকি। আমরা রাজি হয়েছিলাম। এরপর আমরা দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছি, কিন্তু কিছুই ঘটেনি। পরে শুধু পুরুষদেরই সম্মুখযুদ্ধে পাঠানো হয়, কিন্তু আমরাও লড়াই করতে চেয়েছিলাম।’

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পূর্ব লন্ডনে একটি ছোট হাসপাতাল চালাতেন হেলেন টেইলর। কিন্তু সরকারের ব্যয়সংকোচনে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জীবনের প্রান্তসীমায় থাকা মানুষজনের জীবন আরেকটু আরামদায়ক করতে ইউরোপের প্রথম দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি তিনি চালু করেন। এখনো তিনি সেখানেই কাজ করছেন।

"