পাবনা প্রতিনিধি
গৃহকর্মীকে টয়লেটে ৩ দিন আটকে রেখে নির্যাতন
সাভারের বাইপাইল এলাকায় এক শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেবা খাতুন (১২) নামে ওই গৃহকর্মীকে পাবনার চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে। রেবা চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কুঠিপাড়া গ্রামের দিমজুর নুর আলী ও নাসিমা খাতুনের মেয়ে। আর অভিযুক্ত গৃহকর্মী সাভারের বাইপাইল এলাকার মোবাইল ব্যবসায়ী শাহীন আলমের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা আঁখি।
অভিযোগে জানা গেছে, তিন মাস আগে নাটোরের বড়াই গ্রাম উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের গড়মাটি গ্রামের আহসান হাবীব ও তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীন। তাদের মেয়ে আঁখি ও জামাই শাহীনের সাভারের ভাড়া বাসায় তাদের আত্মীয় শিশু রেবাকে গৃহকর্মী হিসেবে রেখে আসেন। এর কিছুদিন পর থেকেই আঁখি বিভিন্ন অজুহাতে রেবাকে নির্যাতন করত।
মারধরের পাশাপাশি ভয় দেখাতে টয়লেটে বন্দি করে রাখা হতো। চাহিদামাফিক খেতে দেওয়া হতো না। সম্প্রতি রেবা অসুস্থ হয়ে পড়লে আঁখি তার মা শাহনাজ পারভীনের মাধ্যমে গত রোববার গড়মাটি গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে মোবাইলের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে রেবার স্বজনরা তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যেতে বলেন।
গত মঙ্গলবার শাহনাজ পারভীন রেবাকে তাদের বড়িতে নিয়ে এলে তার শারীরিক অবস্থা দেখে সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। রেবার রোগাক্রান্ত চেহারা দেখে বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নাসিমা খাতুন। ওইদিন রাতেই তাকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার হাতপাতালে বিছানায় শুয়ে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে রেবা বলে, ‘আমাকে ওই আপা (আঁখি) কথায় কথায় রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে মারধর করত। খাবার দিত না। দিলেও তা পরিমাণে অল্প। আমি যখনই মোবাইলে বাবা-মার সঙ্গে কথা বলতাম সব সময় পাশে বসে থাকত। যেন কিছু না বলি তাদের। তিন দিন আমাকে টয়লেটে বন্দি করে রেখেছিল ওরা। ওদের কাছে আর যাব না।’ এই বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে রেবা।
রেবার মা নাসিমা খাতুন বলেন, আমার মেয়ের সারা শরীরে মারধরের দাগ হয়ে আছে। আমরা গরিব মানুষ। আমি এর ন্যায় বিচার চাই। অভিযুক্ত গৃহকর্মী আঁখি খাতুনের মা শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘নির্যাতনের বিষয়টি সত্য নয়। মাঝে মধ্যে কথা না শুনলে রেবাকে ভয় দেখাত। সে আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। চিকিৎসার সব খরচ বহন করতে চেয়েছি। তারপরও আমাদের দোষারোপ করা হচ্ছে।’
চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. স ম বায়েজিদুল ইসলাম বলেন, ‘রেবা নামের এই শিশুটি খুবই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এছাড়া সে অপুষ্টিতেও ভুগছে। পুষ্টিকর খাবার খেলে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠবে। চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম আহসান হাবিব বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। যেহেতু ঘটনা সাভার থানা এলাকায় সেহেতু ওখানে অভিযোগ দিতে হবে।
"