এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী
জীবনযুদ্ধে হার না মানা একজন হাছিনা
জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক সাহসী নারী হাছিনা ইয়াসমিন লাভলী। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়। বর ছিল কর্মহীন। তবে বিয়ের পর কর্মঠ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর ছয় বছরের ব্যবধানে দুটি কন্যা সন্তান আসে তাদের সংসারে। শুরু হয় যৌথ লড়াই। পরিশ্রমী জীবনে সুখের আলো দেখা শুরু হয়। এরপর হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন স্বামী সেলিম রেজা। জ্বলে ওঠার আগেই নিভে যায় আশার প্রদীপ। কিন্তু এমন ধাক্কাতেও হার মানেনি হাছিনা, শুরু করেন নতুন যুদ্ধ, এগিয়ে চলার সংগ্রাম। এক পর্যায়ে নাটোর থেকে ২০১৬ ‘জয়িতা’ নির্বাচিত হন তিনি। এবার তিনি রাজশাহী থেকে ‘জয়িতা’ নির্বাচিত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
হাছিনা ইয়াসমিন লাভলির জন্ম ১৯৬৯ সালে। নাটোর পৌরসভার আলাইপুর কাপুড়িয়া পট্টি এলাকার মরহুম ইসাহক আলী মিয়ার কন্যা তিনি। মায়ের নাম লুৎফুননেছা। একই মহল্লার মরহুম আফিল উদ্দিনের বেকার ছেলে সেলিম রেজার সঙ্গে ১৯৮৩ সালে বিয়ে হয়। স্বামী সেলিম রেজা তার বাবার নয় ছেলে মেয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ। আর হাছিনা নয় ভাই বোনের মধ্যে ছিল সপ্তম।
শশুরের পূর্বেই স্বামীর মৃত্যু হওয়ায় সবকিছু থেকে বঞ্চিত হন হাছিনা। উপায় না দেখে পাঁচ ও দুই বছরের কন্যা সন্তান নিয়ে ফিরে যান বাবার বাড়ি নাটোরে। শুরু করেন নতুন যুদ্ধ। ১৯৯২ সালে ভর্তি হন নবম শ্রেণিতে। এরপর বাবা-মায়ের সহযোগিতায় পর্যায়ক্রমে নিজে ও সন্তানদের সুশিক্ষায় গড়ে ওঠার প্রচেষ্টা। পড়াশোনার পাশাপাশি হাতের কাজ করে একসময় গড়ে তোলেন বুটিক হাউস। সেই বুটিকে ক্রমেই কর্মচারী সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ থেকে ২৫ জনে। ১৯৯৫ সালে ইত্যাদি শপিং সেন্টার চালু করেন। কিন্তু ওই মার্কেটে একটি মাত্র মহিলা দোকানী হওয়ায় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালে এসএসসি পাশ করেন। কৃষিপণ্য ট্রাইকোডার্মা (ছত্রাক) নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং গ্র্যাজুয়েশন করেন ১৯৯৯ সালে। জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন নার্সারী ব্যবসা। ২০০৪ সালে ৫০ হাজার আপেলকুল ও বাউকুল চারা বিক্রির মাধ্যমে কিছু টাকা হাতে আসে। এরপর ২০০৫ সালে নাটোর নববিধান গার্লস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে (এমপিও ভুক্ত) স্কুলে বিনা বেতনে কম্পিউটার কাম সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। সাত বছর পর তিনি এমপিও ভুক্ত তালিকায় আসেন। কিন্তু দুই বছর পর ২০১৩ সালে প্রধান শিক্ষকের ষড়যন্ত্রে চাকরি হারান হাছিনা। চাকরিকালীন ব্যাংক লোন করার অজুহাতে জালিয়াতির মাধ্যমে হাছিনার ৭৯ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেয় তারই আপন ভাই।
এরপর রাজশাহীতে অবস্থানরত বড় মেয়ের জামাইয়ের সহযোগিতায় রাজপাড়া এলাকার সদ্যবর্ধিত কাশিয়াডাঙ্গা থানার রায়পাড়া হলদার পাড়ায় বসবাস শুরু করেন। তারপর জমি লিজ নিয়ে কৃষিপণ্য ট্রাইকোডার্মা মিশ্রিত জৈব ও কেঁচো সার উৎপাদন ও বাজারজাত (রাশ ট্রাইকো কম্পোষ্ট টি-৩২) করছেন। এ প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ১০-১২ জন মহিলার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এ জৈব সারটির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও অর্থের অভাবে কৃষকের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না হাছিনা। নির্ভরযোগ্য জামিনদারের অভাবে ব্যাংক ও এনজিও থেকেও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি। অথচ, এর আগে নাটোরে থাকা অবস্থায় হাছিনা ইয়াসমিন লাভলী ‘জয়িতা’ নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১৬ সালে। তবে সরকারিভাবে আর্থিক সুবিধা পেলে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানটি একদিকে যেমন বাড়বে অন্যদিকে কর্মসংস্থান তৈরি হবে এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর।
"