আবদুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জে বিআরটিএ অফিস
দালালের দৌরাত্ম্য : ঘুষ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স মেলে না
বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের ভোগান্তির শেষ নেই। একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চার থেকে পাঁচবার ধরনা দিতে হচ্ছে সরকারের সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআরটিএ-তে। ঘুষ না দিলে কিংবা দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড (মাঠ) টেস্ট পরীক্ষায় পাস করার পর নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সরাসরি ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দেয়ার সিরিয়াল পেতেও দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের কর্মকর্তা মোঃ আবদুল খালেক তার অফিসে ঘুষ লেনদেনের কথা স্বীকার করেননি।
বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলে দালাল চক্রের সদস্যের মাধ্যমে করাতে হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স। সরকার নির্ধারিত পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১৬৭৯ টাকা এবং রেফারেন্স বাবদ ৩৪৫ টাকা মোট ২০২৪ টাকা ও অপেশাদারদের ক্ষেত্রে ২৫৪২ এবং রেফারেন্স ৫১৮ টাকা মোট ৩০৬০ টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার পরে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগেই দিতে হচ্ছে ২ হাজার টাকা। আবার অনেকের কাছ থেকে এর থেকে বেশিও নেয়া হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফাইল বাবদ দিতে হয় ৫০০ টাকা, অফিস সহকারীকে দিতে হয় ৩০০ টাকা, ছবি তুলতে দিতে হয় ১০০ টাকা পরিশেষে লাইসেন্স নিয়ে আসার সময় চা-পান খেতে দিতে ১০০ টাকা।
তবে এ বিষয়ে বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের উচ্চমান সহকারী আবদুর রাজ্জাক বলেন, পেশাদারদের ক্ষেত্রে ২০২৪ টাকা ও অপেশাদারদের ক্ষেত্রে ৩০৬০ টাকার বেশি এক টাকাও নেয়া হয় না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে শুধু সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে এখান থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া খুব একটা দেখা যায় না।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীর চাহিদামতো ঘুষের টাকা না দিলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের নির্ধারিত ফি জমা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি তোলার দিনক্ষণও মিলে না। সরেজমিন দেখা গেছে, পরীক্ষায় পাস করার পর নারায়ণগঞ্জ সার্কেলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দিচ্ছেন। এরপর বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের অফিস কক্ষের মধ্যেই অবস্থিত কাউন্টারে ছবি তোলার সিরিয়ালের জন্য সময় নিতে হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে যাদের কাছ থেকে উৎকোচ পাওয়া যায় লাইসেন্সের ফি জমা দেয়ার দিনই ছবি তোলার অনুমতি দেয়া হয় তাদের। বাকিদের দেড় থেকে দুই মাস পরে ছবি তোলার সময় দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের কয়েকজন অসাধু কর্মচারীর দালালের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার কারণে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছেন লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের। এছাড়া দালাল ছাড়া লাইসেন্স পাওয়ার চেষ্টা করাটাও যেন এক ধরনের পাপ। বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলে সক্রিয় রয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন দালাল। তাদের মধ্যে মনির, নেকবর, শামীম বেশ প্রভাবশালী।
গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে অবস্থিত বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে কথা হয় গাড়ির লাইসেন্সপ্রত্যাশী রাশেদুল হকসহ আরো দুজনের সঙ্গে। তারা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের রেফারেন্স নাম্বার নিয়েছেন। পরীক্ষা দেওয়ার সময় ২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। পাস করার পর ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ছবি তোলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ১০০ করে টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া সর্বশেষ লাইসেন্স আনার সময় ১০০ টাকা দিতে হয় চা-পানের জন্য।
বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মোঃ আবদুল খালেক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বর্তমানে সব কিছু অনলাইনে হয়, টাকা জমা হয় ব্যাংকে, ম্যানুয়ালি কিছু করা হয় না। তাই বাড়তি টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া তিনি সরকারি সেবাপ্রত্যাশীদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন, তাহলে দুর্নীতি বন্ধ হবে।
আবদুল খালেক আরো বলেন, যদি কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিয়ে অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার জন্য কিছু দিন আগেও ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
"